নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি বছর ২০২৩ সাল থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম- এ তিন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে।আগামী বছর ২০২৪ সাল থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম এই চার শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। নতুন বছরের শুরুতে ওই চার শ্রেণিতে পড়ানো হবে নতুন শিক্ষাক্রমের বই। এর ফলে বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে মাধ্যমিকের লেখাপড়ায়। ইতোমধ্যে পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করায় বিভিন্ন মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম (কারিকুলাম)।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, নতুন কারিকুলাম চূড়ান্ত করার পর পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়ার পর ১০ শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো সবাই পড়বে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে ঐচ্ছিক বিষয়গুলো পড়বেন শিক্ষার্থীরা। অর্থাৎ বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্যে বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিক থেকে।
নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার ফলে কোন শ্রেণিতে কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, তা এরই মধ্যে নির্ধারণ করেছে এনসিটিবি। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিশু শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষাই দিতে হবে না। তাদের শুধু শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে। এ ছাড়া ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। একইভাবে হবে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন; তবে জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হয়েছে শতভাগ।
নতুন শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নেওয়া হবে পাবলিক পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৫০ শতাংশ। বাকি ৫০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে সামষ্টিক। একইভাবে জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন শতভাগ করা হয়েছে। তবে দশম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা এই শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুযায়ী হবে। অন্যদিকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর প্রতি বর্ষ শেষে একটি করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফল প্রস্তুত করা হবে।
এনসিটিবি’র সূত্র জানায়, চলতি বছর যে তিনটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকর করা হয়েছে তার মধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে সবচেয়ে বেশি ত্রুটি-বিচ্যুতি লক্ষ্য করা গেছে। দুটি কমিটি করে এসব ত্রুটির সংশোধনীও ইতোমধ্যে জারি করা হয়েছে। তবে আগামী বছরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আবারও পরিবর্তন আসছে। এর মধ্যে বড় পরিবর্তন হচ্ছে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বিষয়ে। এ বিষয়ে ‘অনুশীলন’ ও ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ নামে দুটি বই দেওয়ার কথা থাকলেও সেখান থেকে সরে এসেছে এনসিটিবি। এখন এই বিষয়ে বই হবে একটি। আর বিষয়বস্তুতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তুলনামূলক কম হলেও অন্যান্য বিষয়েও থাকছে পরিবর্তন। সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী বছর থেকে এই দুই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের বিষয়বস্তুতে প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার ওপর প্রাধান্য কমিয়ে আধুনিক ইতিহাসের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি নয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণির জন্যও ‘অনুশীলন’ ও ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ নামে দুটি পাঠ্যপুস্তক থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখন সব শ্রেণিতেই এই বিষয়ে একটি বই থাকবে। এখন শুধু বিজ্ঞান বিষয়ে ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ ও ‘অনুশীলন বই’ নামে দুটি পাঠ্যপুস্তক থাকবে। অন্যান্য বিষয়ের পাঠ্যবইয়ে ছবিসহ বিষয়বস্তুতেও কিছু কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমের ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে। আর উচ্চ মাধ্যমিকে একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।
শিপ্র/শাহোরা/