ক্রীড়া প্রতিবেদক
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর একটু কঠিনই হবে! কন্ডিশন ও পূর্বেকার অভিজ্ঞতা টেনে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ফিল সিমন্স। একই সুর আওড়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। গুরু-শিষ্যের এমন বক্তব্যে গুঞ্জন ওঠেÑ তবে কি হারের আগেই হেরে বসল বাংলাদেশ! হয়েছে অনেকটা সেরকমই। অ্যান্টিগাতে দৃশ্যমান লাল-সবুজ দলের আরেকটি ব্যর্থতার গল্প। অম্ল-মধুর এই সিরিজে বাংলাদেশের ভাগ্যে জুড়েছে কেবল অম্লটাই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩৩৪ রান তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে থামে ১৩২ রানে, ক্যারিবিয়ানরা জিতেছে ২০১ রানের বিশাল ব্যবধানে। দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এটি সফরকারীদের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৫তম জয়। একই সঙ্গে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে হারের বৃত্ত ভাঙল উইন্ডিজ।
অ্যান্টিগা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজই সাফল্য অর্জনের পথে তা তৃতীয় দিনের শেষ বিকালে স্পষ্ট হয়। মিরাজদের ৩৩৪ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে সে দিনই ১০৯ রানে ৭ উইকেট তুলে নেয় ক্যারিবিয়ানরা। নতুন দিনটি বাংলাদেশের জন্য ছিল পাহাড় ভাঙার মতোই কঠিন। কারণ, জয় পেতে তিন উইকেটে তাদের প্রয়োজন ছিল ২২৫ রান। উইকেটে স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে ছিলেন কেবল জাকের আলী। নতুন দিনে তাকে ঘায়েল করতে পারলেই কার্যসিদ্ধ হতো উইন্ডিজের। বাংলাদেশের উইকেট ভাঙতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি স্বাগতিকদের। চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় ওভারের (৩২) শেষ বলে হাসানকে ফেরান জোসেফ।
এদিন অনেকটা হুড়মুড়িয়ে উইকেট পড়ে বাংলাদেশের। জাকের আলী কিছুটা চেষ্টা করেছেন বৈ। তার সে চেষ্টা ব্যবধান কিছুটা কমাতে সাহায্য করেছে। ৩৭তম ওভারে জোসেফের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে সাজঘরমুখো হয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। কুমার ধর্মসেনার ওই সিদ্ধান্তের পরই কফিনে শেষ পেরেক পড়ে বাংলাদেশের। মাঠ ছাড়ার আগ পর্যন্ত ৫৮ বলে ৩১ রান সংগ্রহ করেন তিনি। শেষ দিকে শরিফুল রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরায় ৯ উইকেটে ১৩২ রানে থামে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস।
অ্যান্টিগায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্যারিবিয়ানদের পেস তাণ্ডবের কাছে ধুঁকেছে বাংলাদেশ। কেমার রোচ, জেইডেন সিলস, শামার জোসেফ, জাস্টিন গ্রাভেস ও আলজারি জোসেফেরা রীতিমতো শাসন করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটারদের। জেইডেন (৫) স্বাগতিকদের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারী। দ্বিতীয় ইনিংসে রোচ ও তার বোলিং তোপেই ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের টপঅর্ডার। জাকির হাসান, মোমিনুল হক ও শাহাদাত হোসেনকে ফিরিয়ে আশা ভেঙে দেন রোচ। আর প্রথম উইকেটটি ছিল জেইলসের।
স্পিনে তুলনামূলক দুর্বল, স্বাগতিক হওয়াতে বাড়তি চাপÑ সব মিলিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে অ্যান্টিগায় নেমেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তার মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা বিপক্ষে পরাজিত হয়েছিল দলটি। সব শঙ্কা উড়িয়ে অ্যান্টিগা টেস্ট নিজেদের করে নিল ক্যারিবিয়ানরা।
টেস্ট অভিষেকের বছরেই বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে এক পঞ্জিকাবর্ষে হাসানের সর্বোচ্চ উইকেটের কীর্তি, তাসকিন আহমেদের ৮ উইকেট, মুমিনুলের অর্ধশতÑ এই কটিই কেবল অর্জন অ্যান্টিগা টেস্টে। স্বীকৃত ব্যাটারদের অসহায়ত্বে সিরিজ পিছিয়ে গেল বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট আগামী ৩০ নভেম্বর। কিংস্টন ওভালে গড়াবে টেস্ট ম্যাচটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪৫০ ও ১৫২ (অ্যালিক ৪২, ব্রাথওয়েট ২৩, জশুয়া ২২; তাসকিন ৬/৬৪, মিরাজ ২/৩১)
বাংলাদেশ : ২৬০ ও ১৩২ (মিরাজ ৪৫, জাকির ৩১, লিটন ২২; রোচ ৩/২০, জেইডেন ৩/৪৫, জোসেফ ২/৩২)
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০১ রানে জয়ী
শিপ্র/শাহোরা/