বিশেষ প্রতিবেদক
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসে অর্থের বিনিময়ে কর্মচারী নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। চলতি মাসের ২৯ মার্চ নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নিয়োগ কমিটি ইতোমধ্যে পদ ভেদে ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে বলে অভিযোগে জানা যায়। সে অনুযায়ী প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘৃণিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সিভিল সার্জনসহ নিয়োগ কমিটির সদস্যরা।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ৮টি শুন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ দেয়া হবে ১২৮ জনকে।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সরকারি চাকরির নামে সোনার হরিণ ধরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতিরা। এ সুযোগে, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নাটক সাজিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে যাচ্ছে সিভিল সার্জন সুফিয়ান রুস্তম সমন্বয়ে গঠিত নিয়োগ সিন্ডিকেটের মাষ্টার মাইন্ড দুর্নীতির ছারপোকা, এক যুগের বেশি সময় সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য বিভাগকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ্য সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা আশেক নেয়াজ। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন ওই অফিসের কম্পিউটার অপারেটর ও হিসাব রক্ষক।
একটি সূত্র জানায়, সাতক্ষীরায় মেধাশুন্য স্বাস্থ্য সেবা উপহার দেয়ার মত ঘৃর্ণিত কাজে লিপ্ত হয়েছে এসব অর্থলোভীরা। বিভিন্ন পদে ১২৮ জন নিয়োগে প্রায় ৯০ ভাগ প্রার্থী ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা চুক্তি হয়েছে। ইতোমধ্যে চুক্তি হওয়া প্রার্থীর অর্ধেক পরিমান টাকা সিভিল সার্জনের সম্মতিতে জমা নিয়েছে বড়বাবু আশেক নেওয়াজ, কম্পিউটার অপারেটর ও হিসাব রক্ষক মছিবুর রহমান।
সূত্র আরও জানায়, লিখিত পরিক্ষায় চুক্তি হওয়া সব প্রার্থীর একি কেন্দ্রে সিট দেয়া হবে। এবং পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক তাদের উত্তরপত্র সরবরাহ করা হবে।
সরজমিনে ঘুরে জানা যায় ,ইতোমধ্যে ২৫ লক্ষ টাকা চুক্তিতে ২ জন, বাকিরা পদ ভেদে ১৫-২০ লাখ নির্ধারন করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে পাওয়া চুক্তি হওয়া প্রার্থীর হলেন- সৈয়দ তৌফিক আহমেদ, মাহমুদুল হাসান, শাশ্বত পাল প্রাপ্ত, তানজিম হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, এস এম মোত্তজা আলী, মমিনুল্লাহ, রবিউল ইসলাম, ইউসুফ হোসেন, সুমাইয়া সুলতানা, আশিক বিল্লাহ, ইস্রাফিল হোসেনসহ প্রায় ৯৫ জন। তাদেরকে পরীক্ষার কেন্দ্র আলাদা করে দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ড. সুফিয়ান রুস্তম বলেন, আমার কাজ আমি করবো। আপনারা যা পারেন করেন। আমার তাতে কিছু এসে যায় না।
খুলনার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ড. মনজুরুল মুরশিদ জানান, নিয়োগে কোন প্রকার দুর্নীতি করার সুযোগ নাই। যদি এরকম কোনো সত্যতা পাওয়া গেলে তাকে সরাসরি পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হবে। আগামীকাল (২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার) আমি সাতক্ষীরায় থাকবো। কোনোভাবে কোনো কারচুপি সহ্য করা হবেনা।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব আনজুমান আরা বলেন, এরকম কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভবনা নাই। যদি ঘটে বা এরকম ঘৃর্ণিত কাজে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জান আশু বলেন, আমি বাহিরে ছিলাম। আসার পরে শুনেছি এরকম লেনদেন হয়েছে এবং এরকম একটা ঘৃণিত পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু আমি পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছি, এই নিয়োগে কোনো প্রকার দুর্নীতি কারচুপি হলে সিভিল সার্জনকে জবাব দিতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগে কোনো প্রকার দুর্নীতি সহ্য করা হবেনা।
শিপ্র/শাহোরা/মেহা/