শিরোনাম :
‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের সেই শিল্পী জীবন মৃত্যু’র সন্ধিক্ষণে আ.লীগ ও ছাত্রলীগ মতাদর্শের রাজনীতি চলবে না: নাহিদ তসলিমা নাসরিনের ‘চুম্বন’ বই ঘিরে বইমেলায় উত্তেজনা; স্টল বন্ধ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে কাজ করছে সরকার; মির্জা ফখরুল নরসিংদীতে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে ছাত্রদলের মিছিল বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কানাডার ভিসা প্রদানে ড. ইউনূসের আহ্বান জুলাই অভ্যুত্থানের নৃশংসতার চিত্র নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার সারাদেশে অপারেশন ডেভিল হান্টে’ গত ২৪ ঘন্টায় গ্রেফতার ৩৪৩ পাইকগাছায় প্রকল্পের টাকা আত্মসাত; অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিন সদস্যের বিরুদ্ধে পুরুষাঙ্গ কাটার প্রতিশোথে স্ত্রীর দুই হাত কেটে নিলেন পাষন্ড স্বামী
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:২৭ অপরাহ্ন

শীতের আগেই সারাদেশে জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত

Reporter Name / ২৮ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

শিরোনাম প্রতিদিন ডেস্ক

শীতকাল আসতে আরও তিনদিন বাকী। হেমন্তের বিদায় বেলায় এসে  পুরো দেশ যেন শীতে কাঁপছে।  শীতের আসার অগেই  যেন  জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। শীতের দাপটে যেন কাবু হয়ে পড়ছে মানুষ। উত্তরের হিমেল বাতাসে আরও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। তীব্র ঠান্ডায় গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে দেশের বিভিন্ন এলাকা।

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই  ঢাকার বাইরে শীত অনুভূত হলেও রাজধানীতে শীত  খুব  একটা অনুভুত হয়নি। অবশেষে সেই শীতের তীব্রতা টের পেলো রাজধানীবাসী। হিমেল কনকনে ঠান্ডা বাতাসে জবুথুবু হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

গত দুই-তিনদিন ধরেই রাজধানীর তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে৷ বাড়ছে শীতের প্রকোপ৷ বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত বহু এলাকার আকাশ কুয়াশায় ঢাকা ছিল। কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি দুপুর পর্যন্ত৷ এরপর সূর্য উঠলেও তা তাপ ছড়াতে পারেনি। বিকাল নাগাদ আবারও হিমেল কনকনে বাতাসের প্রকোপ বেড়ে যায়৷ বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে। দেশের তাপমাত্রা কমে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

শুধু রাজধানী ঢাকাই নয় জেলায় জেলায় শৈত্যপ্রবাহের খবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। উত্তরের জেলাগুলোর সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমের কয়েক জেলায়ও থাকবে এই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর ফলে সারাদেশের আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও বরিশাল অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি আরও বিস্তার লাভ করতে পারে।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলসহ দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। বিশেষ করে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি আরও দুদিন স্থায়ী হতে পারে এবং আরও এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গায় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। হাসপাতাল এবং শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের চেম্বারে রোগীদের লম্বা লাইনও চোখে পড়ছে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ৭ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।

শিরোনাম প্রতিদিনের  বিভিন্ন জেলা  ও উপজেলা  প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে বিস্তারিত।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই রাজধানীর আকাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশার পরিমাণ কমলেও বিকেল থেকেই কুয়াশায় ঢাকা পড়ে। রাজধানীতে এতটা কুয়াশা এই প্রথম। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, সময় যত বাড়বে, কুয়াশার পরিমাণও বাড়তে পারে। আজও কুয়াশা থাকবে। রাজধানীতে তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জে তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি। কুয়াশা ও শীতের এমন দাপট আরও কয়েকদিন টানা থাকতে পারে।

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকাল বুধবার ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বুধবারের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও কনকনে হিমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। গত তিন দিন ধরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় দেখা মেলেনি সূর্যের।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, কয়েক দিনের ঠান্ডায় এখানকার চরের মানুষজন ভীষণ কষ্টে পড়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো শীতবস্ত্র আমরা পাইনি।

পঞ্চগড়: বুধ ও বৃহস্পতিবার সারা দিনই আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও কমতে শুরু করেছে। দিনের বেলাতেও গরম কাপড় পরে বের হতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, তাপমাত্রা ১২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে শীত বস্ত্রের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে। শীতার্ত মানুষেরা সামর্থ্য অনুযায়ী এসব দোকান থেকে গরম কাপড় কিনছেন। গ্রামীণ জনপদের অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ): চা বাগান ও পাহাড়বেষ্টিত চুনারুঘাট উপজেলা কাঁপছে শীতে। বিশেষ করে চা বাগান এলাকাগুলোতে বেড়েছে শীত। গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ১৩ থেকে ১৫ ডিগ্রিতে ওঠানামা করলেও বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৯ ডিগ্রি। দিনে সূর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রয়োজনের বাইরে কোনো মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, শীতজনিত নানা রোগে বিভিন্ন বয়সিরা হাসপাতালে আসছেন।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার): জেলার চা বাগান ও টিলা অধ্যুষিত কমলগঞ্জ উপজেলা। উপজেলায় বেড়েছে শীতের প্রকোপ। গত কয়েক দিন ধরে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী হচ্ছে। পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। সাথে বইছে হিমেল বাতাস। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলার শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শেরপুর: জেলা শেরপুরে গত কয়েক দিন ধরে অব্যাহতভাবে শীত ও ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাতে এবং সকালে বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। শীতের দাপটে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক ও মহাসড়কে ধীরগতিতে চলাচল করছে সব ধরনের যানবাহন।

রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ: বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ফেরি চলাচল শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাক (এজিএম) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। বুধবার রাত ৩টা থেকে নদীতে কুয়াশার পরিমাণ বেড়ে গেলে রাতেই ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। এ সময় মাঝ নদীতে ছোট বড় মিলে দুটি ফেরি আটকা পড়ে। পরে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ফের ফেরি চলাচল শুরু করা হয়। ফেরি বন্ধ থাকায় গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে ১ কিলোমিটার ক্যানেল ঘাট এলাকা পর্যন্ত মহাসড়কে ট্রাকের সারি আটকে থাকে। পরে আস্তে আস্তে সেগুলো পারাপার করা হয়।

হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর): কনকনে শীত। সূর্যের দেখা নেই। প্রচণ্ড শীতে কাঁপছিল মানুষ। স্থবিরতা এসেছে কাজকর্মে। এমনটাই ছিল চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার চিত্র। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ছিল কুয়াশা।

আগৈলঝাড়া (বরিশাল): বুধবার রাত থেকে প্রচণ্ড শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। এখন পর্যন্ত উপজেলায় শীতার্তদের জন্য সরকারিভাবে কোনো শীতবস্ত্র আসেনি।

শীতে কাপছে সারাদেশ। পৌষের আগেই জেঁকে বসেছে শীত। দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এখন মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। সারা দেশে রাতের পাশাপাশি দিনের তাপমাত্রাও নেমে আসছে। হাড়কাঁপানো শীতে নাজুক হয়ে পড়েছে দরিদ্র ও শ্রমজীবি মানুষের জীবনযাপন। তীব্র কুয়াশা ও ঠাণ্ডায় মাঠের ফসল নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে কৃষকরাও।

এদিকে তীব্র শীতে খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো। গতকাল ভোরে  দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর  বিভিন্ন মোড়ে ও চায়ের দোকানের সামনে শীত নিবারণের চেষ্টায় আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নিতে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের মানুষকে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের রিকশাচালক বিল্লাল মিয়া বলেন, আজ প্রচণ্ড শীত লাগছে। ঠাণ্ডার জন্য রিকশা চালানো যাচ্ছে না। হাত ও পায়ের পাতা মনে হচ্ছে বরফ হয়ে যাচ্ছে। পেটের দায়ে বাড়ি থেকে বের হলেও প্যাসেঞ্জার পাওয়া যাচ্ছে না।

গোপালগঞ্জে েএকটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত শাহানাজ পারভীন জানান, সকাল ৮টার মধ্যে অফিসের উদ্দেশে বের হতে হয়। আজ প্রচণ্ড শীতের কারণে রিকশা না নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। যাতে শরীরটা একটু গরম থাকে কিন্তু হিমেল হাওয়ায় জবুথবু অবস্থা।

অবশ্য তীব্র শীতেও হাসপাতালগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখা যাচ্ছে। গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশুসহ প্রায় ২০০ রোগী ঠাণ্ডাজনিত কারণে আউটডোরে চিকিৎসা নেয় বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা: এ এস এম ফাতেহ আকরাম। তবে কুয়াশা ও শীত বাড়ার সাথে  ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়বে।

শিপ্র/শাহোরা/


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!