নিজস্ব প্রতিবেদক
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে যে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে, সেই আন্দোলনে অনেক শিশুও প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। কিন্তু শিশুদের কথা সবাই সেভাবে মনে রাখে না। পরিবারে অনেক মা-বাবাও শিশুর মতামতের গুরুত্ব দিতে চান না। এসব নিয়ে সবার সচেতন হওয়া দরকার। আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে শিশুদের গুরুত্ব দিয়ে, রাষ্ট্রব্যবস্থা যেন হয় শিশুদের উপযোগী।
শিশু অধিকার সপ্তাহের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেছেন বক্তারা। শিশুদের অংশগ্রহণে ‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় একাডেমির সভাকক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিশু একাডেমির মহাপরিচালক তানিয়া খান।
শিশু একাডেমির প্রোগ্রাম অফিসার এ এস এম নাজমুল হক’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিশু একাডেমির প্রোগ্রাম অফিসার লায়লা আরজুমান বানু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিশু একাডেমির মহাপরিচালক তানিয়া খান বলেন, সবার অংশগ্রহণে এ ধরনের সেমিনারে সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। একটা বিষয়ে সমাধানের পথ খোঁজা হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা সবাই চলে যাবো। কিন্তু দেশ থাকবে। দেশটি কেমন হবে, কীভাবে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলবো সেটি নির্ভর করছে আমাদের কাজের ওপর।
শিশুদের উদ্দেশ করে তানিয়া খান বলেন, তোমাদের আলোচনা ডকুমেন্ট হয়ে সরকারের কাছে যাবে। সরকার নিশ্চয়ই বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আমি মনে করি।
মূল প্রবন্ধে শিশু একাডেমির প্রোগ্রাম অফিসার লায়লা আরজুমান বানু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিশুদের ভূমিকাও যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জনকারীদের মধ্যে অনেক শিশুও ছিল। এজন্য শিশু উপযোগী সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
শিশু অধিকার সনদ ও শিশু অধিকার আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন; ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা; শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সবার জন্য সমান শিক্ষার সুযোগ; শিশুদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া; শিশুদের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান লায়লা আরজুমান।
শিশু বিকাশ কেন্দ্র আজিমপুরের শিশু লামিয়া আক্তারের মতে, অনেকে পরিবারের চাপে বাল্যবিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছে। এসব বিষয়ে বাবা-মায়েদের সচেতন করা দরকার। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত ও যানজটমুক্ত করতে অনেক কিছু করার ইচ্ছার কথাও জানায় এই শিশু শিক্ষার্থী।
আরেক শিশু শিক্ষার্থী হুমায়রা সুবাহ বলে, আমি ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন চাই। আমাদের স্কুলে অনেক সময় নষ্ট হয়, তাই দিনের বেলায় খেলতে পারি না। আমার ব্যাডমিন্টন খেলা পছন্দ। আমাদের বাবা-মা নিরাপত্তার ভয়ে সন্ধ্যার পর খেলতে দিতে চায় না। আমি চাই দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমন থাকুক, যাতে আমাদের নিয়ে মা-বাবা চিন্তায় না থাকেন।
কেরাণীগঞ্জ থেকে আসা শিশু পলাশ আহমেদ মনে করে, ফসলের চাষাবাদ ভালোভাবে করতে হবে। কিন্তু কৃষকরা তো ঠিকমতো পারিশ্রমিকও পায় না। তাহলে ভালো চাষাবাদের আশা আমরা কীভাবে করবো?
অভিভাবকদের পক্ষ থেকে মোর্শেদা নাহার বলেন, আমরা শিশুদের জন্য ধূমপান ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ চাই।
আরেকজন অভিভাবক প্রত্যূষা বর্মন শিশু একাডেমির মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘শিশু একাডেমিতে আমাদের অভিভাবকদের বসার জায়গার ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হয়। আমরা যারা ছোট শিশুদের নিয়ে আসি, তাদের জন্য আলাদা খেলার জায়গা অথবা পার্কের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হয়।’
সভাপতির বক্তব্যে শিশু একাডেমির প্রোগ্রাম অফিসার এ এস এম নাজমুল হক বলেন, ‘আমাদের শিশুদের কথা বলার এমন আয়োজন খুবই কম হয়। আজকে শিশুদের কথাগুলো শুনলাম।
অভিভাবকদের উদ্দেশে নাজমুল হক বলেন, ‘আমরা শিশুদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করবো, তাদের কীভাবে গড়ে তুলবো এটি জানতে হবে। শিশুদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো করে গড়ে তুলতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
শিপ্র/শাহোরা/মআম/