শিবপুর প্রতিনিধি
নরসিংদীর শিবপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। এদিকে তথ্য প্রমাণসহ ৭ জন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান।
গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের সৈয়দনগর আতোয়ার রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এবং মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দুটি দায়ের করা হয়।
প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষিকারা যে অভিযোগ এনেছেন তার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। বরং বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষিকা বিভিন্ন সময় দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। এইসব বিষয়ে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। এবং বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।
প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমানের দায়ের করা অভিযোগে অভিযুক্তরা হলেন, সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেম, দীপক চন্দ্র সরকার, দেলোয়ারা ইয়াসমিন, লিটন আহমেদ ভূঁইয়া, মো. ফরিদ মিয়া, মাহফুজুল হক, অফিস সহকারী রাজিউল ইসলাম।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেম ২০১৬ থেকে ২০১৮ এ দুই বছর দশম শ্রেণীর শ্রেনি শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে আদায়কৃত ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে বিদ্যালযের ফান্ডে ৪৯ হাজার ৭৫০ টাকা জমা করেন বাকি এক লাখ ২৫০ টাকার জন্য নোটিশ করার পরেও তা অদ্যাবধি তা ফান্ডে জমা দেননি।
সহকারী শিক্ষক দীপক চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে প্রতারণা মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা অভিযোগ রয়েছে। তিনি ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট এসএসসি পরীক্ষার্থীদের থেকে ফরম পূরণের নাম করে ১০ হাজার টাকা করে নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে ফরম পূরণে ব্যর্থ হলেও সেই টাকা ফেরত না দিয়ে তা আত্মসাৎ করে। এব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে স্বহস্তে লিখিত অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন তিনি। এছাড়াও সৈয়দনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের খলিল মিয়ার স্ত্রী নাছরিন আক্তারের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা ধার নিয়ে দীর্ঘদিনেও তা পরিশোধ করেননি শিক্ষক দীপক চন্দ্র সরকার। পরে ওই মহিলা প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত নালিশ করেন ভুক্তভোগী নাছরিন আক্তার।
সহকারী শিক্ষিকা দেলোয়ারা ইয়াছমিন দশম শ্রেণীর শ্রেণি শিক্ষকের দায়িত্ব পালন কালে ২০২৩ সালের জুন মাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত ১ লাখ টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে তা নিজে আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ৫০ হাজার টাকা ফান্ডে জমা দেন। বাকি টাকা দেই দিচ্ছি বলে অদ্যাবধি পর্যন্ত পরিশোধ করেন নাই।
অপর সহকারী শিক্ষক লিটন ভূঁইয়া ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ৭ম শ্রেণীর শ্রেণি শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে ৩৩ হাজার ৭৮০ টাকা আদায় করে বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন।
ধর্মীয় শিক্ষক মো.ফরিদ মিয়া বিদ্যালয়ে বিলম্বে উপস্থিত হলে শাস্তি হিসেবে তাকে এল.পি প্রদান করা হয়। এর প্রেক্ষিতে তিনি হাজিরা খাতার উপর ঘষামাজা করে। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অযথা মারপিট ও খারাপ আচরণ করায় ক্লাস থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন করেন।
সহকারী শিক্ষক মাহফুজুল হক ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিগত ৮ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিকট হতে ব্যবহারী খাতা স্বাক্ষর করে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি ছাড়াই ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে।
অফিস সহকারী রাজিউল ইসলাম ৭ম শ্রেণীর রোল ১ তাহিয়া নামের এক ছাত্রী তার কাছে প্রাইভেট না পড়ায় উপবৃত্তি তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষকে জানালে রাজিউল ইসলাম প্রধান শিক্ষকের সাথে অশালীন আচরণ করে এবং উক্ত ছাত্রীর উপবৃত্তির সমুদয় টাকা স্কুল কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হয়। বিষয়টি ওই ছাত্রীর অভিভাবক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে অবগত করেন।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেমের সাথে তার অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটা ৮ বছর আগের ঘটনা তখন প্রধান শিক্ষক স্কুলে নতুন আসছে স্কুলের নতুন জয়েন করেই ছাত্র-ছাত্রীদের বকেয়া বেতন আদায়ের জন্য জোড় তৎপরতা চালায়। আমার ক্লাসের বকেয়া বকেয়া ৪৯ হাজার টাকা এর মধ্যে ১৯ হাজার টাকা আদায় হয়। বাকি টাকা কেন আমি আদায় করতে পারিনি তার জন্য আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক আদায় করা হয়।
শিবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দুটি অভিযোগপত্র জমা পড়েছে। যার অনুলিপি আমাকেও দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. সজিব বলেন, অভিযোগ করা হয়েছে মোট চারটা এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকদের পাল্টাপাল্টি এ অভিযোগে ও দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হবে বলে মনে করছে অভিভাবকরা। এ অবস্থায় বলির পাঠাও হতে পারে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এমনটাই ভাবছে অভিভাবকগণ। সন্তানদের নিয়ে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। বিদ্যালয়ের দুরবস্থা দূর করে দ্রুত শিক্ষা পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি অভিভাবকদের।
শিপ্র/শাহোরা/