নরসিংদী প্রতিনিধি
নরসিংদীর চরাঞ্চলগুলোতে একটি মৃত্যুই যেন পক্ষ-বিপক্ষের মামলা-হামলার হাতিয়ার হয়ে যায়। রায়পুরার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল বাঁশগাড়ীতে পল্লী চিকিৎসকের মৃত্যুতেও ঠিক একই চিত্র ফুটে উঠেছে। মো. আব্দুল্লাহ (৪৯) নামে পল্লী চিকিৎসকের মৃত্যুকে হাতিয়ার করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে প্রথমে ফেসবুকে স্ট্যাটাস পরে থানায় মামলা করা হয়েছে। এমনই অভিযোগ প্রতিপক্ষের।
জানা যায়, শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাত পৌনে ১০টায় বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের দিঘলিয়াকান্দি এলাকায় ব্যাটমিন্টন খেলা নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় মো. আব্দুল্লাহ (৪৯) নামে এক পল্লী চিকিৎসক নিহত হয়েছে। নিহত আব্দুল্লাহ ওই এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে।
এর আগে ওইদিন সন্ধ্যায় বাড়ি পাশে আয়োজিত ব্যাটমিন্টন খেলা উপভোগ করছিলেন পল্লীচিকিৎসক আব্দুল্লাহ’র ছোট ছেলে সজীব। খেলার মাঠে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সজীব ও একই এলাকার আলী হোসেনের ছেলে আনোয়ারের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে আনোয়ার ও তার ১০/১৫ জন সহযোগী পল্লীচিকিৎসক আব্দুল্লাহ’র বাড়ীতে গিয়ে তার উপর হামলা চালায়। ওই সময় তাদের কিলঘুসি, লাথি ও টর্চ লাইটের আঘাতে গুরুতর আহত হন আব্দুল্লাহ। রাত পৌনে দশটায় তাকে উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
নিহতের ছেলে রাসেল মিয়ার অভিযোগ করে বলেন, খেলার মাঠে আমার ভাইকে লাথি মারে আনোয়ার। তারপর আবার বাড়িতে এসে আমার বাবা ও ভাইদের ওপর হামলা চালায়। তাদের কিল-ঘুসি, লাথি ও টর্চ লাইটের আঘাতে আমার বাবার মারা গেছে। স্থানীয় এক ইউপি মেম্বার, আলী হোসেন ও লিটন মিয়া এর আগে আমার পরিবারের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। ওই পূর্বশত্রুতার জের ধরেই আমার বাবাকে হত্যা করেছে তারা।
এদিকে পল্লীচিকিৎসক আব্দুল্লাহ’র মৃত্যূর ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারর্যান রাতুল হাসান জাকির মৃত্যুর কারণ না জেনেই পূর্ব শত্রুতার জেরে স্থানীয় ইউপি সদস্য এরশাদকে জড়িয়ে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়।
স্থানীয় মেম্বার এরশাদ জানায়, খেলা নিয়ে উভয় পক্ষের মাঝে মারামারি হয়েছে। কী কারণে মারা গিয়েছে আমার জানা নেই। স্থানীয় চেয়ারম্যান রাতুল হাসান জাকির আমার প্রতিপক্ষ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতা। সম্প্রতি চরমধুয়ার নদী ভাঙ্গন এলাকায় জাকিরের নেতৃত্বে অস্ত্রধারী বাহিনী বালু উত্তোলন করতে থাকলে আমি বাধা দেই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান জাকির তার বাহিনী নিয়ে আমার ও বাড়ীর লোকজনের উপর আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে ৮/১০ কে আহত করে। বাড়ীঘর ও আসবাবপত্র ভাংচুর লুটপাট করে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। এরই জেরে আমার ও আমার লোকজনের উপর ডাক্তার আবদুল্লাহ হত্যার দায় চাপানোর চেষ্টায় ফেসবুকে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। অথচ মারামারির ঘটনায় আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই ।
এব্যাপারে বাঁশগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রাতুল হাসান জাকিরের মোবাইলে (০১৬১৭৮০৩০৭৫ নাম্বার) ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জব্বার বলেন, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শিপ্র/শাহোরা/