নিজস্ব প্রতিবেদক
সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়নের পেটে গেছে যশোরের জেলা পরিষদের মালিকানাধীন অন্তত ৪ হাজার ২০০টি গাছ। প্রায় ১৪ কোটি টাকা মূল্যের এসব গাছ প্রায় ছয় বছর ধরে কাটা হয়েছে। তবে এতগুলো গাছ কেটে ফেলা হলেও এ সময় নতুন করে একটি চারাও রোপণ করেনি জেলা পরিষদ। চলতি তাপপ্রবাহের মধ্যে এই গাছ কেটে ফেলার ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল রবিবার পর্যন্ত টানা ৩৩ দিন ধরে যশোর ও পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহ চলছে। এখানে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, চার সহস্রাধিক গাছ কেটে ফেলার মধ্যদিয়ে গত ছয় বছরে এখানে ৮০০ হেক্টর বনভূমির সমপরিমাণ বন ধ্বংস করা হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর।
জেলা পরিষদ থেকে জানা গেছে, গত ছয় বছরে তাদের মালিকানাধীন চারটি সড়কের ৪ হাজার ২১০টি গাছ কাটা হয়েছে। যার দাম প্রায় ১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৮ সালে যশোর-খুলনা মহাসড়কে ১ হাজার ৮৯৫টি, ২০২১ সালে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের হৈবতপুর সেতু এলাকা থেকে ১২টি গাছ কাটা হয়। এর পরও যশোর-ঝিনাইদহ সড়ক থেকে নানা সময়ে কাটা পড়েছে আরও ৮৩৫টি গাছ। ২০২২ সালে যশোর-চুকনগর মহাসড়কে ৫০৭টি গাছ কাটা হয়।
এদিকে বর্তমানে যশোর-নড়াইল সড়কে ৯৬১টি গাছ কাটা চলছে। যার দাম ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ঐতিহাসিক যশোর-বেনাপোল সড়কে শতবর্ষীসহ ৬৯৭টি গাছ বিক্রির উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে পরিবেশবাদীদের আন্দোলন ও হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞায় আপাতত গাছ কাটা থেকে বিরত রয়েছে জেলা পরিষদ।
যশোর-নড়াইল মহাসড়কে গাছ কাটার কার্যাদেশ দিয়েছে জেলা পরিষদ। ইতোমধ্যে গাছশূন্য হয়ে পড়েছে যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-খুলনা এবং যশোর-চুকনগর মহাসড়ক। যশোর-চুকনগর সড়কে তাকালে কিছুদিন আগেও দু’ধারে প্রচুরসংখ্যক গাছ চোখে পড়ত বলে উল্লেখ করেন সুবীর ঘোষ। রাজারহাট এলাকার এ প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ‘এখন এ সড়ক যেন বিরান ভূমি।’ যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের চুড়ামনকাটি বাজারের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সাত মাস আগেও এই সড়ক বড় বড় গাছ থাকায় শ্যামল ছায়ায় ঘেরা ছিল। এখন সেসব গাছ নেই।’
বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের পরিবেশ নিয়ে কাজ করেছেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. ছোলজার রহমান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের প্রতি অতীত ও বর্তমানের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক আচরণসহ বিভিন্ন কারণে এ অঞ্চলে উষ্ণায়ন বাড়ছে। গত এক দশকের মধ্যে এ অঞ্চলের অনেক সড়ক-মহাসড়কের দুই পাশের গাছ উজাড় করা হয়েছে। জমির হিসাবে সড়কের পাশ থেকে উজাড় করা হয়েছে প্রায় ৮০০ হেক্টরের গাছ। অল্প সময়ে একসঙ্গে এত গাছ কেটে ফেলা গরম বেড়ে যাওয়ার বড় একটি কারণ।
যশোর রোড উন্নয়ন ও শতবর্ষী গাছ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, ‘সড়ক উন্নয়ন হবেÑ ভালো কথা। কিন্তু জেলা পরিষদ অপরিকল্পিতভাবে গাছ কাটছে। তারা একটি গাছও লাগায়নি। যশোর অঞ্চলের মহাসড়কের দু’ধারের সব গাছ খেয়ে তারা মরুভূমি বানাচ্ছে।’
তবে যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগ মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জেলা পরিষদকে গাছ কাটার চিঠি দেয়। সেই চিঠির আলোকে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি ও বিভাগীয় কমিশনারের অনুমোদন সাপেক্ষে গাছ কাটার টেন্ডার করা হয়। গাছ বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারেই জমা হয়েছে।’
যশোর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, ‘মহাসড়কগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য পুরাতন গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই রাস্তার দুই ধার দিয়ে নতুন করে গাছ রোপণ করা হবে। রোপণের কয়েক বছরের মধ্যে গাছগুলো আবারও ঘন জঙ্গলে পরিণত হবে।’
শিপ্র/শাহোরা/