হারুনূর রশিদ
কৃষি নির্ভর জেলা নরসিংদীতে বানিজ্যিক ভিত্তিতে সবজির চাষবাদ করা হয়। জেলার উৎপাদিত সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারী সবজি বিক্রেতারা স্থানীয় সবজি হাট বা বাজার থেকে কিনে নিয়ে যায়। যোগাযোগ ব্যাবস্থার সুবিদার্থে ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের পাইকাররা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উপর বা পাশে গড়ে উঠা সবজি বাজারগুলোতে আসতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এর ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনওই জমজমাট সবজির হাট জমে। মহাসড়ক দখল করে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এসব হাট। আর এই সবজির হাট কেন্দ্র করে ,হাসড়কে প্রায়শ: তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় মহাসড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার চালক ও যাত্রীদেরকে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সকালে মহাসড়ক ঘেঁষে জঙ্গি শিবপুর সবজির হাট এলাকায় সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ভৈরব হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মহাসড়ক খেকেসবজিবোঝাই ভ্যান, অবৈধ সিএনজি, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা সরিয়ে দিলে বেলা সাড়ে ১০ টায় যানজট কিছুটা নিরসন হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কে ক্রেতা-বিক্রেতা ও সবজি বোঝাই ভ্যান, অবৈধ সিএনজি, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা এলোপাতাড়ি সড়কে পার্কিং করা। মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস বিভিন্ন গণপরিবহগুলো সারি বদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পর সামনে দিকে এগিয়ে আবার থেমে যায়। ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারণ মুখর জঙ্গি শিবপুর সবজি। হাটে বিভিন্ন এলাকার চাষিরা ফলফলাদি এবং সবজি বিক্রি করতে আসেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে সবজি কিনতে এসেছেন পাইকাররা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘যানজটের অন্যতম কারণ মহাসড়কে সবজির হাট বসা। হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা এবং তদারকির অভাব। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলে আসলেও মহাসড়ক থেকে বাজার স্থানান্তরে প্রশাসনের নেই কোনো পদক্ষেপ।’
ব্যবসায়ীরা জানান, ‘জঙ্গি শিবপুর, বারৈচা ও মরজাল বাসস্ট্যান্ড বাজারের ভেতরে সবজি ও সীজনাল ফল বেচাকেনার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতারা মহাসড়কেই তাদের উৎপাদিত সবজি, ফলফলাদি নিয়ে বসে পড়েন।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা জানান, জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি সবজির হাট বারৈচা, শিবপুর বাজার। সীজনাল ফলের সবচেয়ে বড় বাজার মরজাল। বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তিনটি অংশে এসব বাজার বসে। প্রতি শুক্র, সোম বুধবার বারৈচা বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসে। রবি ও বৃহস্পতিবার জঙ্গি শিবপুর বাজার বসে। মরজালে প্রতিদিন ভোর থেকে সারাদিন সীজনাল ফলফলাদির হাট বসে। যা সারাদিন ধরে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারণ মুখর থাকে। এ হাট গুলোতে বিভিন্ন এলাকার চাষিরা ফলফলাদি এবং সবজি বিক্রি করতে যানবাহনে করে হাটে আসেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে সবজি কিনতে আসেন পাইকাররা। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শত শত সবজিবোঝাই ভ্যানগাড়ির দখলে থাকে মহাসড়ক। এসময় দেখা দেয় তীব্র যানজট। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে আসলেও দেখার যেন কেউ নেই।
যানজটে আটকা পড়া ঢাকাগামী পরিবহনের চালক মজনু মিয়া। প্রচন্ড রোদে গরমে হাস পস। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘ভাই প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে যানজটে আটকে ছিলাম। ঢাকার যানজটের মতই এখানেও ভয়ানক অবস্থা। এই সমস্যা সমাধান চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, “মহাসড়কে বসা সবজির বাজারগুলোতে এত বেশি ক্রেতা-বিক্রেতা ও ভ্যানের ভিড় থাকে যে, হাঁটাচলাও কষ্টকর। মান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এসব বাজারে ট্রাফিক বা হাইওয়ে পুলিশের সদস্য দেখা না মিললেও মাঝে মধ্যে অভিযানের নামে অবৈধ অর্থ হাতাতে সিএনজি অটোরিকশা ধরে নিতে ঠিক দেখা যায় তাদের। মূলত মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন পার্কিং করা এ যানজট। দ্রুত অবসান চাই।’
ভৈরব হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মো. সাকের আহমেদ বলেন, ‘ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল এসে যানজট নিরসনে কাজ করি। দীর্ঘদিন যাবত সবজির বাজার গুলো বসে আসছে। মাঝে মধ্যে যানজট নিরসনে কাজ করতে হয় আমাদের। জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা মহাসড়কে যানজট নিরসন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
শিপ্র/শাহোরা/হার/