নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বেশ কিছু দাবি নিয়ে গত মাস পর্যন্ত রাজপথে বেশ সক্রিয় ছিল। সর্বশেষ গত অক্টোবরে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, ৭২-এর সংবিধান বাতিল, বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচন অবৈধ ঘোষণার দাবি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্ররা।।
রাষ্ট্রপতি ও সংবিধান বাতিল ছাত্রদের এ দুটি ইস্যুটিতে বিএনপি কড়া আপত্তি জানায়। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এসব ইস্যু আর আলোর মুখ দেখেনি। নতুন করে দুই উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে তারা। রবিবার (১০ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমসহ উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ব্যবসায়ী শেখ বশির উদ্দীন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা মনে করে, তাদের আন্দোলনের ফসল বর্তমান সরকার। কিন্তু তাদের অনেক দাবিই এখনও পূরণ হচ্ছে না। যে কারণে একটু একটু করে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে গত তিন মাসে আমরা অনেক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন পাই নাই। আমরা যেখানে মুজিববাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। সেখানে আমরা দেখেছি মুজিবের ছবিকে পেছনে রেখে শপথ নিচ্ছে সরকার।
মুখ্য সংগঠক মাসুদের মতে, গত তিন মাসে সরকারের অনেক উপদেষ্টাই তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। যেটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সমালোচনা রয়েছে। ছাত্ররা বলছেন, এসব ইস্যুতে তারা যখন মানুষের মুখোমুখি হন তাদেরও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়।
তবে সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, পাবলিক সেন্টিমেন্টের জায়গা থেকে কিছু সমালোচনা হচ্ছে সেটা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি। সে অনুযায়ী যদি কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেটা আমরা ভেবে দেখবো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মনে করছেন, সরকার গঠনের তিন মাসের মধ্যে যে সব অসংগতি তৈরি হয়েছে সেসব নিয়ে তারা কথা বললেও অনেক সংকটের সমাধান হয়নি। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বিষয়টা এমন না যে আমাদের দু’জন প্রতিনিধি থাকার কারণেই সরকার বিতর্ক ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকতে পারে। অবশ্যই তাদের ভুল ত্রুটি থাকলে সেটার সমালোচনা আমরা করবো, করি। কিন্তু আমরা সমালোচনা করি সেটা গণমাধ্যমে প্রকাশের মাধ্যমেই সরকার দেখে। বৈঠক করে আমরা সমস্যার কথা তুলে ধরি না।
আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, এমন তো হওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু হয়ে তো গেছে। এটা নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সাথে কথা বলবো। প্রধান উপদেষ্টা দেশের বাইরে, তিনি আসলে আমরা আলোচনা চাই। অবশ্য সরকারও মনে করছে, এই সংকটের সমাধান সম্ভব আলোচনার মাধ্যমে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, নতুন উপদেষ্টা হিসেবে যাদের নেওয়া হয়েছে তা নেওয়া হয়েছে সরকারের এফিসিয়েন্সি বাড়ানোর জন্য। সব সেক্টরের বেস্ট এক্সপার্টদের নেওয়া হয়েছে। তারপরও যেহেতু এটা নিয়ে সমালোচনা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ক্ষোভ বাড়ছে সে কারণে এটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমরা সবার সাথে কমিউনিকেট ও যোগাযোগ করে এই যে বিরোধ দেখা যাচ্ছে তার সমাধান করার চেষ্টা করবো।
সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে উপদেষ্টা পরিষদে নতুন তিন সদস্য যুক্ত হওয়ার পর তা আরও প্রকাশ্যে এসেছে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই সাথে সংগঠনটির অনেককে ফেসবুকে প্রোফাইল ছবি লাল করেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
মূলত, শিক্ষার্থীদের সমর্থন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়। অথচ তারাই কেন প্রতিবাদ করছে? শুধুই কি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন নাকি ক্ষমতাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বও আছে- সেই প্রশ্নও সামনে আসছে। জবাবে ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকরা জানিয়েছেন, উপদেষ্টা নিয়োগসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশ কিছু কার্যক্রম নিয়ে তাদের কাছেও প্রশ্ন রয়েছে।
গত রবিবার রাতে ফেসবুক প্রোফাইল লাল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ লেখেন, সাঈদ ওয়াসিম মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। পরের দিন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সারজিস আলম লেখেছেন, শুধু ১টা বিভাগ থেকে ১৩ জন উপদেষ্টা! অথচ উত্তরবঙ্গের রংপুর, রাজশাহী বিভাগের ১৬টা জেলা থেকে কোনো উপদেষ্টা নাই! তার উপর খুনি হাসিনার তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছে!
শিপ্র/শাহোরা/