শিরোনাম :
দোকানে টিনের চালা কেটে দুর্ধর্ষ চুরি; নগদ অর্থসহ মালামাল লুট রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে জাতিসংঘের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবো: প্রধান উপদেষ্টা ‘ক্ষমতা মানুষকে পতনের দিকে নিয়ে যায়; ড. মঈন খান’ ঝিনাইদহে শিক্ষার্থীর গলায় ছুরি ধরে ধর্ষণের অভিযোগ রাজশাহীতে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে কর্মী নিহত, ২ নেতা বহিষ্কার বাবা-মায়ের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত আরেফিন সিদ্দিক চট্টগ্রামে আ. লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৫০ নেতাকর্মী গ্রেফতার কুমিল্লায় চাঁদা না দেওয়ায় প্রবাসীকে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার হামলা আমির খানের ৬০ তম জন্মদিনে নতুন প্রেমিকা গৌরী স্প্রাট জাতীয় দলে পঞ্চপাণ্ডবের অবসরের সাক্ষী হয়নি দেশের মাঠ ও সমর্থকরা
শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:৫১ অপরাহ্ন

বিয়ের নামে প্রতারণাই ছাত্রলীগ নেত্রী মুক্তার ‘পেশা’; বিদেশে পাড়ি জমানোর পায়তারা

Reporter Name / ৩৬১ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্পদশালী ব্যবসায়ী কিংবা সরকারী চাকরিজীবী ব্যক্তিদের টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা কামাই করতে বিয়ের সিঁড়িতে বসতো সে। এরপর অপবাদ সহ নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মামলা দায়েরের হুমকি দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়াই হচ্ছে এই যুবতীর কাজ। বলছিলাম নরসিংদী রায়পুরা কলেজ শাখা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেত্রী মুক্তা আক্তারের কথা। বিয়ে করাই যার নেশা ও পেশা। বিবাহিত-অবিবাহিত যুবকদের একের পর এক প্রেমের ফাঁদে ফেলে সবকিছু হাতিয়ে নেওয়াই তার কাজ। এ পর্যন্ত চার-চারটি বিয়ে করেছে পুরুষ খেকো এই নারী। আর এসব বিয়ের পেছনে রয়েছে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের নানা কাহিনি।

মুক্তা আক্তার নামের ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর প্রেমের ফাঁদে পরে নিঃস্ব হয়েছেন এক সেনা কর্মকর্তাসহ একাধিক ব্যক্তি। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের ছাচিয়ামারা গ্রামের দরিদ্র কৃষক মোন্তাজ মিয়া যাকে সবাই মন্তু বলে জানে তার মেয়ে এই মুক্তা।

মুক্তা আক্তার নামের ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর প্রেমের ফাঁদে পরে বিভিন্ন ধরনের হয়রানীসহ মোটা অংকের টাকা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পরা একাধিক যুবকরা এ অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি ) সকালে এই প্রতিবেদকের কাছে ওই যুবতীর প্রতারণাসহ অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে অভিযোগ করেন একাধিক ভুক্তভোগী যুবক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

রায়পুরার একজন প্রতাপশালী ছাত্রলীগ নেত্রী বলেই মুক্ত আক্তারকে সবাই জানেন এবং মানেন। আর রায়পুরায় প্রতাপশালী এই শব্দটা কেবলমাত্র ওই সকল ব্যক্তির সাথে জুঁড়ে দেওয়া হতো যারা নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনের সাবেক সাংসদ রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর সান্নিধ্যে থাকতেন|  আর এমপি রাজুর সান্নিধ্যে থাকা একজন নারীর সম্পর্কে কোন কিছু রায়পুরাবাসীর আর অজানা নয়। ছাত্রলীগের রাজনীতি সম্পৃক্ত হয়ে উচ্চ বিলাসী মন-মানসিকতা পোষণ করতেন মুক্তা। রাজনীতির সুবাদে পরিচয় হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর সাথে। ফলে একেবারে সোনায় সোহাগা।

পুরুষ খেকো এই ছাত্রলীগ নেত্রীর প্রথম বিয়ে হয় উপজেলার আদিয়াবাদ গ্রামের নাজিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির সাথে। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর দুই লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে হয়। ছাত্রলীগের রাজনীতি করা ও এমপি রাজুর সান্নিধ্যে থাকা একজন নারীর মন সংসারে কি বসে ? তাছাড়া যে সংসারের শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদ থাকে সেখানে কি বেলাল্লাপনা করা যায় ? তাইতো মুক্তা বিয়ের পর থেকেই স্বামীকে আলাদা হতে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু নাজিম উদ্দিনকে কোনভাবেই সে বশে আনতে পারছিলনা। ফলে মুক্তার সাথে তিন মাসের বেশি ঘর করা সম্ভব হয়নি নাজিম উদ্দিনের। নাজিম উদ্দিনের ঘরে থাকা অবস্থায় বিয়ে বিষয়টি গোপন রেখে বিডিআর এ চাকরির আবেদন করে সে। এবং সে চাকুরি হয়েও যায় তার। চাকরিতে যোগ দিবে এমনটা নাজিমুদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের বুঝতে না দিয়ে স্বর্ণ গয়না নিয়ে ওই বাড়ি ছেড়ে চলে আসে। পরে তাকে তালাক দেয় মুক্তা। নাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে আদায় করে নেয় দেনমোহরের টাকা।

নাজিম উদ্দিনের ঘর ছেড়ে আসার পর চাকুরিতে যোগ দেয় মুক্তা। কিন্তু তথ্য গোপন করার অপরাধে সেটাও বেশি দিন করতে পারেনি। চাকরি থেকে তাকে ছাটাই করা হয়।

চাকরি হারিয়ে রায়পুরার গৌরীপুরা এলাকার ইতালি প্রবাসী এক তরুণকে প্রেমের জালে ফাঁসায় মুক্তা। প্রেমের মোহে অন্ধ হয়ে ইতালি থেকে ছুটে এসে মুক্তাকে বিয়ে করে ঘরে তোলে ওই তরুণ। কিছুদিন দেশে থাকার পর জীবন জীবিকার টানে আবারো ইতালি পাড়ি জমায় ওই তরুণ। বিডিআর -এ চাকরিকালীন  সময় মুক্তার সাথে পরিচয় হয় উত্তরবঙ্গের এক সেনা কর্মকর্তার। মুক্তার স্বামী ইতালি চলে গেলে ওই সেনা কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে সে। শুরু হয় তাদের মধ্যে মন দেওয়া-নেওয়া। এ অবস্থায় গরিপুর এলাকার ইতালি প্রবাসী ওই তরুণকে তালাক দিয়ে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় অর্থলোভী মুক্তা।

সেনা কর্মকর্তার সাথে শুধুমাত্র মন দেওয়া নেওয়াই নয়, টাকা পয়সাও আদান-প্রদান করতে থাকে তারা। এক পর্যায়ে গোপনে বিয়ে করে সেনা কর্মকর্তাকে। তবে ওই সেনা কর্মকর্তা সাথে বিয়ে বিষয়টি ছিল মুক্তার ছলনা মাত্র। তার মূল উদ্দেশ্য সেনা কর্মকর্তার টাকা হাতিয়ে নেওয়া। করলোও ঠিক তাই। ওই সেনা কর্মকর্তার টাকা পয়সা হাতিয়ে তাকে অনেকটা ব্ল্যাকমেইল করে তার কাছ থেকে সরে আসে সে।

পুরুষ খেকো মুক্তা বর্তমানে তার প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছেন আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রায়পুরার হাসিমপুর নিবাসী মোনায়েম খন্দকারকে। মোনায়েম খন্দাকারের সাথে বিয়ের কাজটাও সেরে নিয়েছিল গোপনে। পরবর্তী মুক্তার বেলাল্লাপনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে মোনায়েম খন্দকারের সাথে তার বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। সে সময় ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি ঢাকতে স্থায়ীয় একজন সাংবাদিককে টাকা দিয়ে সংবাদও প্রকাশও করিয়েছিল।

এদিকে গত ৬ জানুয়ারি নরসিংদী জজ আদালতের রায়পুরা আমলী আদালতে নুরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি ৫৪ জনে নাম উল্লেখপূর্বক এবং ৫০/৬০ জন অজ্ঞাত আসামী করে এক মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় ছাত্রলীগ নেত্রী মুক্তা ১৬ নং আসামী। এই মামলার পর পর আত্মগোপনে চলে যায় মুক্তা।

তার সাথে মোবাইলে (০১৬২৯-৪২৪৪২৭ এই নাম্বারে) যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। বার বার নাম্বারটি বন্ধ দেখা।

অপরদিকে লোক মুখে শুনা যায়, প্রথম অবস্থায় মামলা থেকে তার বাদ দিতে সে এবং তার স্বামী মোনায়েম খন্দকার রায়পুরার বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে আশ্রয় করে কিন্তু  চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বর্তমানে মামলা ও গ্রেফতার এড়াতে স্বামী মোনায়েম খন্দকারে কাছে আয়ারল্যান্ড পাড়ি জমাতে পায়তারা করছে মুক্তা। তার স্বামী মোনায়েম খন্দকারও চেষ্টা চালাচ্ছে।

রায়পুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রবীর কুমার মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আদালতে একটি সিআর মামলা হয়েছে। ওই মামলায় মুক্তা আক্তারও আসামী। মামলার যথাযথ ও সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে রিপোট দেওয়া হবে। যদি সে প্রকৃতপক্ষ দোষী হয় তবে কোন অবস্থায় ছাড় পাবেনা।

শিপ্র/শাহোরা/


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!