শিরোনাম :
বিপিএলের চূড়ান্ত সূচি ঘোষণা তিনি জনগণের টাকা লুটপাট করে স্বামীর বাড়ি চলে গেছেন; রিজভী জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন; ড ইউনূস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বন্দ্ব; নেপথ্যে … গুলিস্তান ও ফার্মগেটে যৌথ বাহিনীর হকার উচ্ছেদ অভিযান বগুড়ায় মাকে হত্যা পর রাখলেন ফ্রিজ বন্ধি;; ডাকাতির নাটক জাতীয় সাঁতারে দেশসেরা সাঁতারু রাফি-যুথী বাঞ্ছারামপুরে আধিপত্য বিস্তারে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, টেঁটাবিদ্ধসহ আহত ১৫ পলাশে সরকারি সড়কের ইট তুলে দেয়াল নির্মাণ, ৫০ পরিবারের যাতায়াত বন্ধ ঢালাও ও গায়েবি মামলায় অন্তর্বর্তী সরকার বিব্রত: আইন উপদেষ্টা
বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ অপরাহ্ন

বন্যার অজুহাতে বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে কাঁচা মরিচ

Reporter Name / ২১ Time View
Update : রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪

নিজম্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে এক দিনের ব্যবধানে দেড়শ টাকা বেড়ে কাঁচা মরিচের কেজি আবারও ৪০০ টাকা। গত জুনের শেষ সপ্তাহেও কেজি ৪০০ টাকায় উঠেছিল। পরে কমে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় নেমে আসে। তবে ঢাকাকে ছাড়িয়ে বেশি দামে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে বরগুনা, ঝিনাইদহ ও মাগুরায়।

শনিবার (১৩ জুলাই) ঝিনাইদহে ৪২০, মাগুরায় ৪৫০ ও বরগুনায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে পণ্যটি বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। হঠাৎ মরিচের দামের ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছে ক্রেতারা। পেঁয়াজের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা। এদিকে কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল ও কুড়িল বিশ্বরোডের মুক্তিযোদ্ধা কেবি মার্কেটসহ রাজধানীর প্রায় প্রতিটি বাজারেই কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে।

গতকাল কারওয়ান বাজারে ভারতীয় কাঁচা মরিচ ৪০০ ও দেশি কাঁচা মরিচ ৩৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছিল। কুড়িল বিশ্বরোডের বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছিল ৩৮০ টাকা। মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারেও ৪০০ টাকার নিচে কাঁচা মরিচ নেই। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, গত শুক্রবার বাজারে দুটি মরিচের গাড়ি ঢুকলেও গতকাল শনিবার কোনো গাড়ি আসেনি। আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

বাজারটিতে কথা হয় রুহুল আমিন নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। বৃষ্টির অজুহাতে মরিচের দাম ৪০০ টাকা হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সব তামাশা গরিবের সঙ্গে। দোকানিরা বৃষ্টির অজুহাতে মরিচের দাম বাড়িয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। একদিনে কী এমন হলো যে হু-হু করে দাম বেড়ে গেল? সোহাগ হাসান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, শুধু কাঁচা মরিচ না, পেঁপের দামও বেড়েছে। এক কেজি পেঁপে ৬০ টাকা নিচ্ছে, আমরা কী খেয়ে বাঁচব? কাকরোলের কেজি ১০০-১১০, ঢেঁড়স ৬০ টাকা। সব শাকসবজির দাম চড়া। বাজারে সরকারের কোনো মনিটরিং নেই। বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে খুচরা দোকানি সবাই যে যার মতো দাম বাড়াচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা কেবি মার্কেটের দোকানি আমিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার আড়ইশ গ্রাম মরিচের দাম ছিল ৬০ টাকা, গতকাল তা ৯০ টাকায় বিক্রি করেছি। প্রতি মণে দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। তারপরও মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় সেখানে সদাই করতে থাকা ফাহাদ হোসেন বলেন, আর কিছু দাম বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করে ফেলেন। আমাদের ক্রেতাদের কথা তো কেউ ভাবে না।

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিবেদক জানান, এক দিনের ব্যবধানেই বরগুনার বেতাগীতে ৩০০ টাকা বেড়ে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এক দিন আগেও পাইকারি বাজার থেকে ২৮০ টাকা দরে কাঁচা মরিচ কিনে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় খুচরা বিক্রি হয়েছে। গতকাল তা বেড়ে ৪৫০ টাকা বা বাজারভেদে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকাও বিক্রি করা হয়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। দাম বেশি হওয়ায় বেচাকেনাও কম। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কোনো সবজিই ৪০ টাকার নিচে মিলেছে না।

ঝিনাইদহ প্রতিবেদক জানান, এখানকার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ওয়াপদা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি করেছি। হঠাৎ পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন হাটখোলা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে মরিচ নষ্ট হচ্ছে। এতে সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বেড়েছে। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া আক্তার চৌধুরী বলেন, নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।

এদিকে জেলায় পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কাটছেই না। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম ওঠানামা করছে। খুঁচরা বাজারে যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এতে নিম্ন আয়ের ও শ্রমজীবী মানুষ পড়েছে বিপাকে। শনিবার মণপ্রতি দাম বেড়ে হয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ঝিনাইদহের পাইকারি পেঁয়াজের বাজারে তিন দিনের ব্যবধানে মণপ্রতি দাম বেড়েছে কমপক্ষে ৫০০ টাকা। গত মঙ্গলবারের সাপ্তাহিক হাটে ৩ হাজার ৭০০ টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি হলেও তিন দিনের ব্যবধানে শনিবার ৫০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ৪ হাজার ২০০ টাকা।

মাগুরা প্রতিবেদক জানান, মাগুরার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে হঠাৎ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল শহরের একতা কাঁচাবাজারে গিয়া দেখা যায়, প্রকারভেদে কাঁচা মরিচ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা। খুচরায় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহেও মরিচের দাম কম ছিল। হঠাৎ বেড়েছে। তবে শনিবার দেশে ভারতীয় মরিচ না আসায় দাম বাড়তির দিকে। পুরাতন বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টির ফলে ক্ষেতের মরিচ অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে দাম একটু বেশি।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।

হঠাৎ কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, বর্ষা মৌসুমে শাকসবজির দাম বাড়ে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে দাম বেড়েছে। বৃষ্টি কমে এলে দামও কমবে আশা করি।

দাম বাড়ানোর পেছনে আড়তদারদের হাত আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রতি মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি করে ৪০ টাকা লাভ করি। এখানে আড়তদারদের হাত নেই। ভারত থেকেও চাহিদামতো মরিচ আমদানি হচ্ছে না।

পণ্যটির দাম বাড়ার পেছনে বৃষ্টি ও বন্যাকে দায়ী করছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। শনিবার এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০ টাকার বেশি ও পেঁয়াজের ১৩০-১৪০ টাকা। বাজেটে বলা হয়েছে, উৎসে কর কমানো হয়েছে ২ থেকে ১ শতাংশ। কিন্তু এর কোনো প্রতিফলন নেই কেন? জবাবে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বৃষ্টি, ভারী বর্ষণ ও বন্যার কারণে কাঁচাপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এই মুহূর্তে ১৮টি জেলায় বৃষ্টি ও ভারী বর্ষণের প্রভাব পড়েছে। বীজতলা তলিয়ে গেছে। এটি সাময়িক। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব, বন্যা-পরবর্তী তারা কী পদক্ষেপ নিয়েছে। সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে বসতে বলব। বর্তমানে কৃষিপণ্যের কী অবস্থা, সেটা জেনে আপনাদের জানাব।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের পণ্য মজুদের সুযোগ দেওয়া হবে না। ভোক্তা অধিদপ্তর সবসময় সচেষ্ট। আপনারা নিজেরাই দেখতে পারছেন ভারী বর্ষণ হচ্ছে। যেখান থেকে আমাদের কৃষিপণ্য আসার কথা, সেখান থেকে আসছে না। মজুদদারের বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত অবস্থান থাকবে। কোনো ব্যবসায়ীকে মজুদদারি করে পণ্যের দাম বাড়াতে দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন,  শনিবার থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে পেঁয়াজ ও আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া শুরু হয়েছে। যেকোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ ও আলু আমদানির সুযোগ রয়েছে। এর আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছিলাম। আমাদের জন্য যে কোটা তা কিন্তু বহাল আছে। সেখান থেকে পেঁয়াজ আনার সুযোগ রয়েছে।

এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোয় দেখা গেছে, আলুর কেজি ৬০-৬৫ টাকা, আদা ২৮০-৩০০, পেঁয়াজ ১১০-১২০, রসুন ২০০-২২০, লম্বা বেগুন ৯০-১১০, গোল বেগুন ১২০-১৪০, করলা ১০০-১১০, কাকরোল ৮০-১০০, পেঁপে ৫০-৬০, টমেটো ১৮০-২০০, পটোল ৬০-৭০, ঝিঙা-ঢেঁড়স ও চিচিঙ্গা ৬০ ও কচুরমুখি ৮০-১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া চালের দামও কিছুটা বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা রেজওয়ান বলেন, মিনিকেট চাল প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা ও কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৬৬ টাকা, ব্রি২৮ বস্তায় ১০০ ও কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!