নিজস্ব প্রতিবেদক
কলাপাড়ায় লিখে লেখাপড়া শুরু করেছিলেন। তবে তা বেশী দূর আগাতে পারেনি। প্রাইমারির পাঠ চুকানোর অনেক আগে ঝড়ে পড়েন। পড়ালেখায় মন বসতো না। তাই আর যাওয়া হয়নি স্কুলে।
প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা নেই, নেই কোন শিক্ষা সনদ। শিক্ষা গ্রহণ বলতে শুধু আদর্শ লিপি বইটি পড়েছিলেন তিনি। আদর্শ লিপি বই পড়া সেই লেখকের গল্প, উপন্যাস ও কবিতার বই মিলিয়ে মোট ৬টি বইয়ের রচয়িতা নুরুল ইসলাম নূরচান। ইতোমধ্যে ৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘বকুলতলা’ নামে একটি বই প্রকাশ হওয়া অপেক্ষা আছেন। ইতোমধ্যে বইটির ছাপা শেষ হয়ে বর্তমানে তা বাধাইয়ের অপেক্ষায়।
১৯৭৪ সালের ১ জানুয়ারি নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের পেতিপলাশী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা প্রয়াত সামসুউদ্দিন এবং মা মরিয়ম বেগম। পড়ালেখা বলতে স্থানীয় কালুয়ারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুদিন আসা-যাওয়া করেছেন তিনি। পড়ালেখায় মন বসতো না তাই প্রায়শ: স্কুল ফাঁকি দিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতেন। আর স্কুল ফাঁকি দেওয়ার কারণে বেশীদূর যেতে পারেননি তিনি।এখানেই পড়াশোনার পাঠ চুকাতে হয়। বাবা-মা পড়াশোনা জানতেন না । তাই পড়ালেখার কদরটা বুঝতেন না। পড়াশোনা না করায় দিনে বাবার সাথে ক্ষেতে খামারে কাজ করার পর রাতে পাশের মৈশাদী গ্রামের সুলতান মিয়ার কাছে আদর্শ লিপি বই পড়েছেন। পড়ালেখা বলতে এই আদর্শ লিপি। আর আদর্শ লিপিতেই শুরু আদর্শ লিপিতেই শেষ।
সৃজনশীল অনলাইন গ্রুপ `অনুভবে নরসিংদী’ এর পক্ষ থেকে নুরুল ইসলাম নূরচানকে বিগত আগস্ট মাসের জন্য শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
নুরুল ইসলাম নূরচান নরসিংদী জেলার সাহিত্যমোদিদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ও আলোচিত একজন লেখক। নরসিংদী জেলা প্রশাসক কর্তৃক আয়োজিত ২০২৪ সালের মহান একুশে বইমেলায় গল্প কবিতার মিলিয়ে তার তিনটি বই প্রকাশিত হয়। মেলায় বইগুলোর ৩০০ কপি বই বিক্রি হয়েছে।
লেখক নুরুল ইসলাম নূরচান সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি ১৯৯১ সালে স্থানীয় সাপ্তাহিক নরসিংদীর খবর পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পাশাপাশি দেশের দ্বিতীয় সারির জাতীয় দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার শিবপুর উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। নুরুল ইসলাম নূরচান শিবপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে দুইবার সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে শিবপুর সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে মাসিক সাহিত্য ম্যাগাজিন ‘সময়ের খেয়া।’
নিরলসভাবে সাহিত্য চর্চার কারণে গত ৭ মার্চ তাকে শিবপুর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। তার লেখা গল্প কবিতা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত লেখা পড়ে নরসিংদী জেলাসহ সারাদেশে তার একটি নিজস্ব পাঠক বলয় তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।
২০১০ সালে তিনি কবি খান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কারসহ তিনটি সম্মাননা পেয়েছেন।
নুরুল ইসলাম নূরচানের প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো, ‘এরই নাম জীবন (উপন্যাস, ১৯৯৭), চেনা পৃথিবী অচেনা মানুষ (উপন্যাস, ২০১০) বাইশে মাঘ (নির্বাচিত গল্পগ্রন্থ, ২০১১), হঠাৎ একদিন (গল্পগ্রন্থ) এবং ‘অবশেষে’ (কাব্যগ্রন্থ, ২০২৪)। তার লেখা অপর একটি গল্পের বই ছাপা কাজ শেষ বাধাইয়ে অপেক্ষায় রয়েছে।
শিপ্র/শাহোরা/