নরসিংদীর পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাম্প বিকল হয়ে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ ১৭/১৮ দিন ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা যায়। ফলে রোগী ও তাদের সাথে থাকা লোকজনের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২১ মার্চ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পানির পাম্প বিকল হয়ে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে কবে নাগাদ পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। পানি সরবরাহ না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সকল প্রকার অস্ত্র পাচার (অপারেশন) বন্ধসহ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাসপাতালের আন্ত: বিভাগে ভর্তি রোগীসহ চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
হাসপাতাল সূত্র ও রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একমাত্র পানির উৎস পাম্পটি যান্ত্রিক সমস্যার কারনে ২১ মার্চ থেকে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে ১৭ দিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় অনেক রোগী হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে।
৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বর্তমানে পুরুষ ওয়ার্ডে ৪ জন ও মহিলা ওয়ার্ডে ৪ জন রোগীসহ মোট ৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। রোগী ও তাদের স্বজনরা বাইরের দোকান, পুকুর ও টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে আসছে। পানি সংকটে শৌচাগারে পানি ব্যবহার কম হওয়ায় চারদিকে ছড়াচ্ছে দূর্গন্ধ। সব মিলিয়ে মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, পানি সরবরাহ না থাকায় হাসপাতালের আবাসিক এলাকায় চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারি মিলিয়ে ৩৫টি পরিবার এখানে আবাসিক ভবনে বসবাস করে। এতে শৌচাগারসহ খাবারের পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। রোগীদের তো অবস্থা আরও খারাপ। হাসপাতালের মেঝে, রোগীদের বিছানার চাদর ও অন্যান্য কাপড় পরিষ্কার করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফেরদৌসি আফসার জানান, রমজান মাসে এমন ঘটনা অকল্পনীয়। এতে শুধু মাত্র রোগী বা তাদের স্বজনরাই নয় আমরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মচারী ও কর্মকর্তারা দূর্ভোগ পোহাচ্ছি। সেহরি ও ইফতার করার সময় বাহিরে থেকে পানি আনতে হচ্ছে। পানি সংকটে অস্ত্রোপচারসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা প্রায় বন্ধ রয়েছে। অনেক রোগী না বলেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
বহির্বিভাগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রয়োজনে পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি ৫৫ বছর বয়সী নজরুল ইসলাম ও নাজির উদ্দিন খান জানান, কিডনি সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ৪ দিন ধরে এ হাসপাতালে আছেন। পানি না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। শিগগিরই চলে যাবেন বলেও জানান তারা।
শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি তৌহিদা ও জেসমিন জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে পানি না থাকায় বাথরুমে যেতে পারি না। দুর্গন্ধ পুরো রুমে ছড়িয়ে পড়েছে। নিজের সিটে বসে থাকাটাও মুশকিল।
অপরদিকে কাউছার বিন হাসান জানান, আমার স্ত্রী মৌসুমি আক্তারকে নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি হই। ডাক্তাররা পানি সংকটের জন্য সিজার করতে না করলেও পরে তাদের অনুরোধে করে সিজার করাই এবং মেয়ে সন্তানের বাবা হই। সিজার করার সময় আমি বাহির থেকে প্রায় ৪০ বালতি পানি তাদের এনে দেই। এত দুভোর্গের সম্মুখীন আমি কখনো হইনি।
পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নন্দা সেন গুপ্তা বলেন, আমি এখানে সবে মাত্র যোগদান করেছি। আমি আসার আগে থেকেই এখানে পানির পাম্পের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেটা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে। আশা করি অল্প দিনের মধ্যেই পানির সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
নরসিংদী সিভিল সার্জন ফারহানা আহমেদ এ ব্যাপারে বলেন, পানির পাম্প মেরামতের কাজ চলছে। আশা করছি রাতের মধ্যেই পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
শিপ্র/শাহোরা/শামি/