শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন

পলাশে আধুনিক পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ, কমবে খরচ

মো. সাব্বির হোসেন / ১২ Time View
Update : শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদীর পলাশে প্রথমবারের মতো আধুনিক পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ করছে  স্থানীয় কৃষি বিভাগ। পরীক্ষামূলকভাবে ট্রে পদ্ধতিতে (প্লাস্টিকের ফ্রেম) উচ্চ ফলনশীল উফশি জাতের বোরো ধান ব্রি ধান-৯২ এর বীজতলা তৈরি করছে কৃষি বিভাগ। উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের নোয়াকান্দা গ্রামের মাঠে ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে ১৫০ বিঘা জমিতে এ উফশি জাতের ধান রোপণ করা হবে। এ পদ্ধতি অবলম্বনে ধানের উৎপাদন খরচ কমানোসহ শ্রমিক সংকট নিরসন ও কৃষকেরা লাভবান হবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বৈরী আবহাওয়া থেকে সহজে বীজতলা রক্ষায় ট্রে পদ্ধতি সহায়ক বলছে কৃষি বিভাগ। এই পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে সমন্বয়ের ভিত্তিতে চাষাবাদে আগ্রহ সৃষ্টি করবে এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রগুলো অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ করে। এ গুলো পরিচালনার জন্য জনবল লাগে কম।

এ বছর প্রথম পলাশের নোয়াকান্দা গ্রামের ১২০ জন কৃষকের একটি গ্রুপ করে নতুন এ পদ্ধতিতে কৃষক ফারুক মিয়ার ৪৫ শতাংশ জমিতে মোট ৪ হাজার ৫০০টি ট্রেতে উফশি জাতের বোরো ধানের এ বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার জানান, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান রোপণের জন্য ট্রেতে উৎপাদিত চারাই প্রয়োজন। এই পদ্ধতিতে বোরো ধানের বীজ ফেলতে প্রতিটি প্লাস্টিক ট্রেতে ১ ইঞ্চি স্তরের মাটি দিয়ে বীজ বপণ করা হয়।

মাঠে বীজতলা তৈরির পদ্ধতি এবং ট্রেতে বীজতলা তৈরি পদ্ধতি একই। তবে ট্রেতে লাগানো ধান বীজ চারা শতভাগ উৎপাদন হয়। ট্রেতে উৎপাদিত চারা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার (ধান রোপণ করা মেশিন) দিয়ে মাঠে রোপণ করা হবে। চারা রোপণ থেকে ধান কাটা, ধান মাড়াই সবই হয় মেশিনের সাহায্যে। এতে সময় লাগে খুবই কম এবং নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চারা রোপণ সম্ভব হয়।

প্লাস্টিক ট্রেতে প্রথম এবার পরীক্ষামূলকভাবে এখানে ধানের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। এতে ভালো ফলও পাওয়া যাবে।  আনুষ্ঠানিকভাবে এই পদ্ধতির ধানের চারা মাঠে বপন করা হবে। সাধারণত বৈরী আবহাওয়া হলে মাঠে বীজতলা প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু ট্রেতে করা বীজতলা সহজেই প্রচন্ড শীত ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার হাত থেকে বাঁচানো যায়।

ট্রেগুলো রাতে প্লাস্টিকের সিট দিয়ে ট্রেগুলো ঢেকে রাখা হয়। আধা মিলিমিটার থেকে এক মিলিমিটার বড় হলেই মাত্র ২০ থেকে ২৫ দিনে এসব চারা রোপনের জন্য প্রস্তুত হয়। পরে এ গুলো রাইস ট্রান্সপ্লান্টার (ধান রোপন করা মেসিন) দিয়ে এসব চারা ওই ১২০ জন কৃষকের মোট ১শ’ ৫০ বিঘা জমিতে বপন করা হবে। এটা কৃষকদের মধ্যে সমন্বয়ের ভিত্তিতে চাষাবাদ কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকদের সময় ও খরচ বেচে যায় অনেকাংশ।

কৃষক ফারুক মিয়া, রহিমউদ্দিন ও মোখলেছুর রহমাহ সহ একাধিক কৃষক জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমরা এবার প্রথম এ পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদন করেছি এবং মেশিনের মাধ্যমে এ ধানের চারা জমিতে রোপন করা হবে। আর এ ১৫০ বিঘা জমির ধানের চারা ও জমিতে রোপন বাবদ আমাদের শুধু সেচ ও চাষের খরচ দিতে হচ্ছে । আধুনিক পদ্ধতিগত এই চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে এলাকার অন্য কৃষকদের মাঝেও। প্রতিদিনই নতুন নতুন কৃষকরা ট্রে পদ্ধতির এই চারা রোপণ দেখতে ছুটে আসছেন সমলয়ের এই প্রদর্শনীতে।

পলাশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আয়েশা আক্তার জানান, এই প্রযুক্তি ব্যবহারে এক দিকে যেমন কৃষকদের খরচের পরিমাণ কমে আসে একই সাথে ধানের ফলনও বেড়ে যায় কয়েক গুন। সমলয় পদ্ধতির এই চাষাবাদে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগীতা দিয়ে আসছি আমরা। তাছাড়া কৃষকদের যন্ত্রের মাধ্যমে উদ্ধুদ্ধ করার জন্য এ সমলয় করা হয় এবং ছোট ছোট অনেক জমি যাতে এক সাথে করে অনেক জমিতে বিশেষ করে ৫০ একর জমিতে এই সমলয় করতে হবে।যাতে অনেক কৃষক একত্রে মিশে এই সমলয় করতে পারে।

শিপ্র/শাহোরা/সাহো/


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!