শিরোনাম :
ক্ষমতায় এলে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেবে বিএনপি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাক ঢুকে পড়ল বাজারে; চাপা পড়ে নিহত ২; আহত ১০ বিচ্ছেদের চিন্তা উড়িয়ে সিঁথি ভর্তি সিঁদুরে কান উৎসবে ঐশ্বরিয়া টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে বন্যার আশঙ্কা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিল পদ্মায় বালুমহাল দখল কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ; ৭ জন গুলিবিদ্ধ রায়পুরা প্রেসক্লাবের বাষির্ক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত মাসের ব্যবধানে ভোলপাল্ট আ.লীগ থেকে বিএনপিতে সাংবাদিককে জেলে ভরার হুমকি দিলেন ইউএনও বিইউবিটিতে জাতীয় পর্ব এআই অলিম্পিয়াড ২০২৫ সম্পন্ন
শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৯:১৫ অপরাহ্ন

নরসিংদী সরকারি টেকনিক্যাল কলেজে প্রশিক্ষক নিয়োগে শুরু থেকেই অনিয়ম

Reporter Name / ৪৫ Time View
Update : শুক্রবার, ৯ মে, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

নরসিংদী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে “প্লাম্বিং এন্ড পাইপ ফিটিং” ও  “ইলেকট্রিক্যাল ইনস্ট্রলেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স” পদে অতিথি প্রশিক্ষক পদে অনুষ্ঠিত  নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত (নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, লিখিত, ব্যবহারিক ও মৌখিক) ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

রায়পুরা উপজেলা সদরে স্থাপিত নরসিংদী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে  Skills for Industry Competitiveness and Innovation program (SICIP) প্রকল্পের অধীনে চলতি মাসের ৫ মে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এতে ৩টি পদের বিপরীতে ৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।কিন্তু নিয়োগের শর্ত না মেনেই ওই ৩টি নিয়োগের অভিযোগ উঠে।

সোহরাব উদ্দিন ভূঞা ও কাকন মিত্র নামে দুইজন নিজেদের যোগ্য পাত্রী দাবী করে উক্ত নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নরসিংদী জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন।

অভিযোগে বলা হয়,  নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার নিয়ম ভঙ্গ করে যোগ্য ব্যক্তি থাকা স্বত্বেও অযোগ্য ব্যক্তিকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরিকল্পিতভাবে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে প্রার্থী বাছাইয়ে বাদ দেওয়া হয় একাধিক যোগ্য প্রার্থীকে।আর যারা মোটা অংকে উৎকচের বিনিময়ে এ নিয়োগ দেন তারা তাদের অপরাধ আড়াল করতেই মূলত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বলা হয়।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক বরাবর সোহরাব উদ্দিন ভূঞার লিখিত অভিযোগে জানা যায়

কেবল মাত্র স্থানীয় দৈনিক “দৈনিক সময়ের মুক্তচিন্তা”  পত্রিকায় উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়। অথচ সরকারী বিধি-বিধান অনুযায়ী দুটি জাতীয় (একটি বাংলা ও একটি ইংরেজী)ও একটি স্থানীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নিয়ম থাকলে নিয়োগ পত্রিয়ার শুরুতে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়। যাও একটি মাত্র স্থানীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হয় সেটিও সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্ত নয়। স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পদের সংখ্যা উল্লেখ নেই এবং কোন শর্তাবলীরও উল্লেখ করা হয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে ৪টি পদে লোক নিযোগের কথা বলা হলেও রেজাল্ট শীটে ৬টি ক্যাটাগরির কথা উল্লেখ করা হয়। আবার রেজাল্ট শীটে স্মারক দেওয়া আছে। লোকাল পত্রিকার বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া ৪নং (জবপ্লেসমেন্ট কর্মকর্তা) পদে কোন প্রার্থী পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞপ্তির ২নং পদের (প্লাম্বিং এন্ড পাইপ ফিটিং) জন্য ৬টি আবেদন জমা পরে। আবেদনকারীদের মধ্যে ৩ জন ডিপ্লোমাধারী হওয়া স্বত্বেও লিখিত পরীক্ষার জন্য ১ জন ডিপ্লোমা ও ১ জন অধ্যক্ষের পছন্দের এসএসসি পাশ প্রার্থীকে পরীক্ষা অংশগ্রহণের  সুযোগ দেয়। তার সাথে রফা করেই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।অধ্যক্ষের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে গিয়ে ৬ জন প্রার্থীর যোগ্যতা থাকা সত্বেও তাদের মধ্য থেকে ৪ জনকে বাদ দিয়ে মাত্র দুই জনের লোক দেখানো পরীক্ষা নেওয়া হয়।

নিরপেক্ষ এক্সপার্ট দিয়ে প্রশ্নপত্র এবং খাতা দেখা ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও অধ্যক্ষ (নিয়োগ কমিটির সভাপতি)  তার পছন্দের আস্থাভাজন (প্লাম্বিং এন্ড পাইপ ফিটিং)ফাহমিদা জাহানের পছন্দের লোক নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। নিয়োগপ্রাপ্ত রাজা সরকারের অভিজ্ঞতার সনদটিও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরী করা হয়।

অভিযোগকারী সোরহাব হোসেন ভূঞা বলেন, ‘ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় তাকে পুরাতন নষ্ট মালামাল দেওয়া হয়। তাছাড়া, মালামাল সময় মত সঠিকভাবে সরবরাহ করা হয়নি। যা দেওয়া হয়েছিলো তা ঢাকনাবিহীন নষ্ট হাইকমট, ফ্লাসিং, সিষ্টার্ন এর ভিতরে কোন মালামাল ছিল না। মালামাল না থাকার কারণে প্র্যাক্টিক্যালে সমস্যা হয়। তবুও আমি সময় মত কাজ সম্পন্ন করি। অপরদিকে, পছন্দের প্রার্থী রাজা সরকারকে সকল মালামাল নতুন ও সময় মত দেওয়া হয়। অথচ অধ্যক্ষের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর আবু সাঈদ পছন্দের প্রার্থী রাজা সরকারকে পরীক্ষার সকল কাজে সহযোগিতা করেন ‘

নিয়োগ কমিটির সভাপতি দীর্ঘদিন চিফ ইন্সস্ট্রাক্টর পদে থাকার পর প্রিন্সিপাল পদে পদায়ন হওয়ার পরও নরসিংদী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে তার চেয়ার পুনরায় বহাল থাকে। একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও একক স্বেচ্ছাচারিতায় উক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্রয় সংক্রান্ত মালামালের ভুয়া ভাউচার, বিভিন্ন প্রকল্পের এবং নরসিংদী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এর সকল প্রকার কাচামালের টাকা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে।

অভিযোগে আরও বলা হয় যে, নরসিংদী শহরের প্রাণকেন্দ্রে জেলখানা মোড়ের পাশে চিনিশপুর মৌজায় প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন অধ্যক্ষ হাসিনা ইয়াসমিন। এছাড়া, নরসিংদীর বিভিন্ন জায়গায় নামে বে-নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন যা আয় বহির্ভূত।

SEIP এবং Asset প্রজেক্ট এর বিধান মতে ছাত্র-ছাত্রীদের একাউন্টে চেক দেওয়ার কথা থাকলেও সে বিধি-বিধানকে পাশ কাটিয়ে নামে/বেনামে নিজস্ব লোকদের নামে চেক লিখে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

অপর অভিযোগকারী কাকন মিত্র লিখিত অভিযোগে বলেন, অতিথি প্রশিক্ষক (ইলেকট্রিক্যাল ইনস্ট্রলেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স) এ যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে; নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যেভাবে থাকার কথা বাস্তবে তার কোন মিল নেই। নিয়োগে সুপারিশ প্রাপ্ত সাইফুল রহমান ২০২০ সালে ডিপ্লোমা পাস করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তার ৭ বছর অভিজ্ঞতা হয় নাই। তাছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত মাষ্টারস ক্রাফটম্যান/ফোরম্যান অভিজ্ঞতার কথা বলা আছে যদিও সেই সনদ দেওয়া থাকে সেটি জাল জালিয়ারিত মাধ্যমে তৈরী করা। সুষ্ঠু তদন্তেই তা ধরা পড়বে। এদিকে নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তথ্য প্রচারের অভিযোগ এনে ইউএনওকে অত্র প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষককে আটক করিয়ে থানায় পাঠানো হয়। পরবর্তী স্থানীয়  নেতাদের চাপের মুখে তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনে অভিযোগকারীদের দাবী উক্ত নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় বহুল প্রকাশিত জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মধ্যমে নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ দিলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মা শান্তি পাবে।

এব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সভাপতি নরসিংদী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাসিনা ইয়াসমিন কথা বলতে তার (০১৭১৬-০১২৩৩৪ এই নাম্বারে) মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি সেটি রিসিভ করেননি।

পরে নিয়োগ কমিটির সদস্য সিভিল ইন্সট্রাক্টর ফাহমিদা জাহানের মোবাইল ০১৭৯৬-৪০৬০০৫ নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।

নিয়োগ কমিটির সদস্য বেলাব টিএসি কলেজের অধ্যক্ষ ড. শান্তি রঞ্জন সরকারের কাছে এ নিয়োগের বিপরীত মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। যদি কিছু জানার থাকে তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ অথবা ইউএনও’র কাছে জানতে পারেন।

রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিযোগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিধি-বিধান ভঙ্গের বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি আর এ বিষয়ে কোন কথা বলেননি।

উল্লেখ্য, অভিযোগকারীদের জানায়, অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও নিয়োগ কমিটির সভাপতি হাসিনা ইয়াসমিন বিগত ১৫ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তিনি চিফ ইন্সট্রাকটর থেকে গত ৩০ ডিসেম্বর অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি লাভ করেন । ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে অত্র প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়া তার আচার আচরনে সে রকম ভাব পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া দীর্ঘদিন এক প্রতিষ্ঠানে থাকার ফলে বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তাছাড়া পদোন্নতির পরেও তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানে থেকে যাওয়ার ফলে এখানে বিভিন্ন অনিয়মগুলো তার কাছে নিয়মে পরিনত হয়েছে।

শিপ্র/শাহোরা/


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!