নরসিংদী প্রতিনিধি
নরসিংদীতে জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া কারাবন্দিদের মধ্যে শেষদিন পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত ৩০ বন্দিসহ ৪৭৭ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। নরসিংদী জেলা প্রশাসন ঘোষিত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ছিলো পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের আত্মসমর্পণের শেষদিন। এদিন রাত আটটা পর্যন্ত ১৩৪ জনসহ গত চারদিনে সর্বমোট ৪৭৭ জন কারাবন্দি নরসিংদীর বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হক’র আদালতে সংশ্লিষ্ট আইনজীবির মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেছে। এদের মধ্যে ৪৪৭ কয়েদি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন। বাকী ৩০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করলে পরে তারা আদালতের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেন। এ নিয়ে সর্বমোট ৪৭৭ জনকে কারাগারে আনা হয়েছে।
নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম জানান, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সোমবার থেকে বন্দিরা আত্মসমর্পণ করার জন্য আদালতে আসা শুরু করেছেন। গত ৪ দিনে মোট ৪৭৭ জন কয়েদি আইনজীবী সমিতিতে এসেছে। সবাই আত্মসমর্পণ করেছে। এর মধ্যে পালিয়ে যাওয়া মোট কয়েদি ৫৭.৭৪ শতাংশ আসামি আত্মসমর্পণ করেন। সোমবার ৫ জন, মঙ্গলবার ১৪৮, বুধবার ১৯০ এবং বৃহস্পতিবার ১৩৪ জন বন্দী আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের মধ্যে বেশকিছু সাজাপ্রাপ্ত ও হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার
কারাগারের অস্ত্রাগার থেকে লুট হওয়া ৮৫টি অস্ত্র ও ৮ হাজার ১৫টি গুলির মধ্যে এ পর্যন্ত পুলিশ ৪১টি অস্ত্র ও ১ হাজার ৯১টি গুলি উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে চায়না রাইফেল ১৮ টি, বিডি-০৮ রাইফেল ১৪ টি ও শর্টগান ৯ টি।
মামলা ও গ্রেফতার
এদিকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস বর্বরোচিত হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় কারাগার কর্তৃপক্ষের দুটি মামলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা এবং সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগে জেলার বিভিন্ন থানায় ৮টি মামলা দায়ের করাসহ সর্বমোট ১০টি মামলা হয়েছে। এসকল মামলা এ পর্যন্ত ১৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে নিকটবর্তী বিভিন্ন কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
৩ টি তদন্ত কমিটি গঠন
নরসিংদী জেলা কারাগারে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট ও বন্দিদের পালানোর ঘটনায় ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার মধ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করেছেন আইজি প্রিজন। ছয় সদস্যের কমিটি করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এপর্যন্ত ৪১টি অস্ত্র, ১ হাজার ৯১টি গুলি উদ্ধার এবং ১৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারে এবং জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৪৭ জন আত্মসমর্পণ করেছে।
এদিকে নরসিংদী জেলা কারাগারকে নতুন করে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। কারাগারের প্রধান ফটক মেরামতের পাশাপাশি এটির ভেতরে বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ সচল করার কাজ করা হচ্ছে। হামলা ও সহিংসতা রোধে কারা কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে নতুন অস্ত্র ও গুলি। কারাগারটির জন্য নতুন জেলার ও জেল সুপারসহ একাধিক কারারক্ষী পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়া জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ২ নারীসহ অপর এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও র্যাব-১১ সদস্যরা।
অপরদিকে সব শঙ্কা উড়িয়ে ধীরে ধীরে নরসিংদীর জনজীবনে স্বস্তি ফিরছে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়েছে জেলার সাধারণ মানুষ। খোলা হচ্ছে দোকানপাট। সড়কে চলছে যানবাহন। গত শুক্রবার থেকে নরসিংদীতে বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক তাণ্ডব হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ইটাখলা পুলিশ ফাঁড়ি, পাঁচদোনা পুলিশ ফাঁড়ি, নরসিংদী জেলা পরিষদ ভবন, মাধবদী পৌরসভা ভবনসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অগ্নিসংযোগ করে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালায়।
শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া হামলা ও নৈরাজ্যে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হন। তবে বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে বিক্ষোভকারীদের মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম কর্মীদের। জেলা পুলিশের সদস্যসহ কমপক্ষে ৩ শতাধিক আহত হয়েছেন।
শিপ্র/শাহোরা/