নোয়াখালী প্রতিনিধি
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘তিনি স্বামীর বাড়িতে গেছেন। আমি বলতে চাই- তিনি বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে কী নিয়ে গেছেন? তিনি আদানি বিদ্যুৎ নিয়ে গেছেন, বিদ্যুতের টাকা লুট করে নিয়ে গেছেন, সিন্ডিকেটের টাকা স্বামীর বাড়িতে নিয়ে গেছেন। এসব জনগণের টাকা, ভর্তুকির টাকা, শ্রমিকের টাকা।’
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকালে নোয়াখালীর চৌমুহনী রেলওয়ে ময়দানে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘তিনি মেট্রোরেলের টাকা পাচার করেছেন, মেগা প্রজেক্টের টাকা পাচার করেছেন। ভাই-বন্ধু সিন্ডিকেট দিয়ে বিদ্যুৎ মিটার দেওয়ার জন্য টাকা লুট হয়েছে। বর্তমানে সিন্ডিকেটের খেসারত দিতে হচ্ছে।’
নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের কথা বলে কিন্তু ডেটলাইন দেয় না। সেটা কেন? এটা তো রহস্যজনক।’ এ সময় সরকার এখন হেডমাস্টারের দায়িত্ব পালন করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারকে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ‘আপনারা সংস্কার করবেন কিন্তু সবাই মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি স্কুলের হেডমাস্টার? উনারা একটা সংস্কারের পাঠ দেবেন, সেটা তৈরি করে একটা সিলেবাস তৈরি করবেন, তারপর রাজনৈতিক দলগুলোকে আগে শিক্ষাদান করবেন। এটা মনে হচ্ছে তাদের ইচ্ছা। তারা এখন স্কুলের হেডমাস্টারের দায়িত্ব পালন করছেন।’
‘যারা দেশ চালিয়েছে, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল যারা ১৫-১৬ বছর যাদের ছেলেরা রক্ত দিয়েছে, গুমের শিকার হয়েছে, ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছে, এত আত্মদানের পরেও তাদের শেখাতে চান। বারবার ক্ষমতা পরিচালনার অভিজ্ঞতা হচ্ছে বিএনপির। আরও অনেক রাজনৈতিক দল আছে যারা আন্দোলনে ছিল। আপনারা মনে করছেন বিএনপিসহ তারা সবাই অশিক্ষিত। তাদের আগে সংস্কার শিখাই, তারপর নির্বাচন হবে,’ বলেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন অ্যাডভাইজর বলেছেন, খালি নির্বাচন নির্বাচন করলেই হবে? আমি অ্যাডভাইজরকে বলছি- আপনি কি হেডমাস্টার? আমরা সব ছাত্র? আপনি আমাদের শিক্ষা দেবেন আমরা শিখব, আমরা কি জানি না সংস্কার কী? আপনারা একটা প্রস্তাব দিতে পারেন, কিন্তু প্রস্তাব দিতে কত দিন সময় লাগে? সেই প্রস্তাব দেবেন নির্বাচিত সরকারের কাছে। এই জন্য নির্বাচন দিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা পার্লামেন্টে যাবে তারা মূর্খ নয়। যদি তাদের মূর্খ ভেবে থাকেন তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কত সময় লাগে নির্বাচন দিতে?’
এত সংকট কেন? প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমার মনে হয় গণআন্দোলনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না, বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করতে পারছেন না। তাই পতিত সরকারের লোককে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বসিয়েছেন। আপনারা বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরদের বসিয়ে রেখেছেন। তারা তো আপনাকে ব্যর্থ করবেই।’
বাজারদর নিয়ে তিনি বলেন, ‘আলুর কেজি কেন ৭৫-৮০ টাকা, নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না কেন? আপনি সিন্ডিকেটবাজদের কেন গ্রেফতার করতে পারছেন ন? দুর্বলতা কোথায় এটা একটু জানতে চাই। এটা তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের কাম্য নয়। কেন এটা বাড়ছে, মানুষতো অনেক ধরনের প্রশ্ন করে।’
বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাখ্যা চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রহীম, অ্যাডভোকেট এবিএম জাকারিয়া, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্য শামীমা বরকত লাকী, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির সভাপতি জহির উদ্দিন হারুন।
এ সময় নোয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য গোলাম মোমিত ফয়সাল, বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুল হক আবেদ, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন আলম উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আন্দোলন সংগ্রামে নিহত ও আহত নেতাকর্মীদের পরিবারের মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
শিপ্র/শাহোরা/রহাবা/