খেলাধূলা ডেস্ক
৩৩তম জাতীয় সাঁতারের প্রতিযোগিতা সমাপ্ত হয়েছে। জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতা দেশসেরা সাঁতারু হবার গৌরব অর্জন করেছে পুরুষদের মধ্যে সামিউল ইসলাম রাফি ও মেয়েদের গ্রুপে যুথী আক্তার।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সমাপনী দিনের শেষদিকে নারী বিভাগে ১০০ মিটার ব্যাক স্ট্রোকে পুলে নামেন যুথী আক্তার। খালি চোখেই দেখা যাচ্ছিল প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে কতটা এগিয়ে তিনি। সাঁতার শেষে যখন নিজের টাইমিং শুনলেন আনন্দে ফেটে পরলেন মাদারীপুরের এই সাঁতারু। ০১:১১.৮৩ টাইমিং নিয়ে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন তিনি। চারটি স্বর্ণ, একটি রৌপ্য এবং দুটি জাতীয় রেকর্ড গড়ে এবারের আসরের সেরা সাঁতারু হয়েছেন যুথী।
বাবার স্বপ্নপূরণ করতেই সাঁতারে এসেছিলেন যুথী। বাবা এখন আর বেঁচে নেই। তবে তার স্বপ্ন পূরণে নিজেকে দিন দিন উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন নৌবাহিনীর ১৯ বছর বয়সি এই সাঁতারু। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সেরা সাঁতারু হয়ে যুথী বলেন, ‘আমার কোচ মাহফুজা খাতুন শিলা। উনার অধীনে ভালো করছি। সামনে হাঙ্গেরিতে ওয়ার্ল্ড সুইমিংয়ে যাব। আশা করি, এই পারফরম্যান্স আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। ওখানে টাইমিং আরও কমানোর চেষ্টা করব।’ বাবা বরাবরই মেয়ের সাঁতারের খোঁজ রাখতেন বলে জানিয়েছেন যুথী, ‘কখনও কখনও এ রকম হয়েছে যে দিনে চার-পাঁচবার করে ফোন করেছেন। প্র্যাকটিস কেমন হয়েছে, শরীরের কী অবস্থা- এসব খোঁজ নিতেন। প্রেরণা দিতেন ভালো করে প্র্যাকটিস করার। বলতেন ভালো কিছু করতে হবে। বাবার সাপোর্টটা সবচেয়ে বেশি ছিল আমার। বাবা না থাকার কারণে সাপোর্টটা কম পাই। কিন্তু বাবাকে অনেক বেশি মিস করি। বাবা থাকলে আজকের দিনে অনেক বেশি খুশি হতেন। বেঁচে থাকলে আমার জন্য হলেও তিনি এখানে আসতেন।’
অন্যদিকে ছেলেদের ইভেন্টে পাঁচটি স্বর্ণ, একটি বোঞ্জ এবং তিনটি নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়ে সেরা পুরুষ সাঁতারু হয়েছেন অলিম্পিকে সেরা টাইমিং করে আসা সামিউল ইসলাম রাফি। সেরা সাঁতারু হয়ে উচ্ছ্বসিত রাফি। আগামী মাসে হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে খেলবেন অলিম্পিয়ান সাঁতারু রাফি। সেখানে নিজের সেরাটা দিতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি। বিশ্ব সাঁতার সংস্থা ফিনার বৃত্তি নিয়ে থাইল্যান্ডে গেছেন দুই বছর আগে। সেখানকার অনুশীলনের ফাঁকে বাংলাদেশে এসে অংশ নিয়েছেন ৩৩তম জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে। রাফির কথায়, ‘আমি আসলে দ্বিতীয় ধাপে থাইল্যান্ডে গিয়ে আগের টাইমিংয়েই পৌঁছাতে পারছিলাম না। যদিও কোচ বলেছিলেন সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপরও এটা নিয়ে খুব হতাশ হয়ে পড়ি। এর ওপর হঠাৎ করে জাতীয় সাঁতারের তারিখ ঘোষণা করা হলো। ভেবে পাচ্ছিলাম না কী হবে, না হবে? এরপর কোচ আমাকে গত ২ মাস কঠিন ট্রেনিং করান। এতেই টাইমিংয়ে এত উন্নতি হয়েছে আমার।’
প্রতিযোগিতার চতুর্থ ও শেষ দিনে সাঁতারে আটটি ও ডাইভিংয়ে দুটি ইভেন্ট হয়েছে। এ দিন সাঁতারে দুটি ইভেন্টে নতুন জাতীয় রেকর্ড হয়েছে। সব মিলিয়ে সাঁতারে ১০টি ইভেন্টে নতুন জাতীয় রেকর্ড হলো। জাতীয় সাঁতারে এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এই সংস্থাটি জিতেছে ৩২টি সোনা, ২৬টি রুপা ও ১২টি ব্রোঞ্জ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১০টি সোনা, ১৫টি রুপা ও ২৩টি ব্রোঞ্জ জিতে হয়েছে রানার্সআপ।
শিপ্র/শাহোরা/