নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহীর ঈশ্বরদীর লিচু সুমিষ্ট ও রসালো হওয়ায় সারাদেশে সুনাম রয়েছে। বেশি লাভের আশায় চাষিরা অপরিপক্ব লিচু গাছ থেকে পেরে বিক্রি করছেন। অপরিপক্ব লিচুই বিক্রি হচ্ছে ঈশ্বরদী বাজারে। ক্রেতারা ভালো-মন্দ বিবেচনা না করে নতুন ফল হিসাবে চড়া দামে কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
লিচুর রাজধানী বলে খ্যাত ঈশ্বরদীতে মধু মাসের রসালো ফল লিচু মধু মাসের আগেই বৈশাখ মাসে অপরিপক্ব লিচু বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তবে টানা দাবদাহের কবলে পড়ে লিচু ঝরে যাচ্ছে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই পরিপক্ব হওয়ার আগে লিচু বিক্রি করে দিচ্ছেন কোনো কোনো বাগান মালিক। ফলে লিচুর আসল স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভোক্তারা।
বাজারে প্রথম লিচু ওঠায় দাম অনেক চড়া। দেশি মোজাফফর জাতের ১০০ পিস লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। তবে চিকিৎসকরা অপরিপক্ব লিচু না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ।
কৃষি বিভাগ বলছে, লিচুর গুণগতমান ঠিক রাখার জন্য আরও কমপক্ষে দশ দিন পর আটির অর্থাৎ মোজাফফর জাতের লিচু সংগ্রহ করতে হবে। এমনিতেই লিচুর রাজধানী বলে খ্যাত ঈশ্বরদীতে এবারে অর্ধেক গাছে লিচু ধরেনি। ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ঈশ্বরদীর লিচু চাষি-ব্যবসায়ীরা।
লিচু ক্রেতা নাহাল মল্লিক জানান, বাজারে নতুন ফল উঠেছে। যদিও এখনো সম্পূর্ণভাবে পাকেনি। বাড়ির ছোট ছেলে-মেয়ের জন্য নতুন নতুন বলেই বেশি দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রহ্লাদ কুমার কুণ্ডু বলেন, লিচুর গুণগত মান ধরে রাখার জন্য কমপক্ষে আরও ১০ দিন পর লিচু বাজারজাত করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। অপরিপক্ব লিচু খেলে ভোক্তারা লিচুর পুষ্টিমান পাবে না। লিচুর স্বাদ থেকেও বঞ্চিত হবে। এমনকি লিচুর যে ওজন হওয়ার কথা, তাও হবে না।
এদিকে সোমবার (৫ মে) উপজেলার জয়নগর, সাহাপুর, বক্তারপুর, রুপপুর, ছলিমপুর, চরমিকামারী, আওতাপাড়া, বাঁশেরবাদাসহ বেশ কয়েকটি লিচুবাগান ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ গাছেই লিচুর গুটি নেই। যেসব গাছে গুটি আছে তাও নগণ্য। আগে একটি থোকায় ৪০-৫০ টি লিচু থাকলেও এবারে আছে মাত্র ৫-৭টি। মুকুল আসার সময় অধিকাংশ গাছে মুকুল না এসে বের হয়েছে কচি পাতা।
উপজেলার চরমিরকামারী, গ্রামের ৭১ বছর বয়সী রাজ্জাক সরদার আক্ষেপ করে বলেন, লিচু ফলনে এমন বিপর্যয় তিনি আগে কখনো দেখেননি। তার ১১৫ টি লিচু গাছ আছে। গত বছর তিনি এই লিচু বাগান ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু এবারে গুটি না আসায় নামমাত্র টাকায় বাগান বিক্রি করে দিয়েছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ঈশ্বরদীতে এবারে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এ সব বাগানে, দেশী আঁটি লিচু (মোজাফ্ফর) বোম্বাই, চিলি বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার লিচু রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের প্রায় সকল জেলায় পাঠানো হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈরি আবহাওয়া ও পরাগায়নে জটিলতার কারণে এবারে লিচুর গুটি কম এসেছে।
শিপ্র/শাহোরা/