নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ ৮ ডিসেম্বর শিবপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ৭১’ সালের এই দিনে নরসিংদীর শিবপুরের পুটিয়ার ঘোড়াতলা এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধের স্মৃতিগাথা শিবপুরসহ নরসিংদীবাসীর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেয় পাকবাহিনীর ক্যাম্প, তাদের আত্মসমর্থনের মধ্যদিয়ে শিবপুর হানাদার মুক্ত হয়।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন শিবপুর থানার ‘পুটিয়া’র যুদ্ধই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং পাক হানাদার বাহিনী সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সফল সম্মুখ যুদ্ধ। মূলত পুটিয়ার যুদ্ধ নরসিংদী হানাদার মুক্ত হবার গোড়া পত্তন।
তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমাধীন শিবপুর থানা পূর্ব থেকেই ছিল অত্যন্ত রাজনৈতিক সচেতন এলাকা।শিবপুরের তৎকালীন ন্যাপ ও কৃষক নেতা আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার সার্বিক তত্বাবধানে ও নেতৃত্বে গড়ে উঠে বিশাল মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী। বলতে গেলে শিবপুর ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অভয়ারন্য। যুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীকে রেখে ছিল তটস্ত।
দেশের সকল এলাকার মতো নরসিংদী জেলা শিবপুরেও ডিসেম্বর মাসে পাক বাহিনীর উপর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমন তীব্রতর হয়। ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ফটিক মাস্টারের নেতৃত্বাধীন বেঙ্গল রেজিমেন্ট সম্মিলিত এফ. এফ ৬২ জনের গ্রুপ কমান্ডার সাদেকুর রহমান সরকারের নেতৃত্বে ভোর ৪টায় পাকবাহিনী পুটিয়া সংলগ্ন ঘোড়াতলা ক্যাম্পে আক্রমন চালায়। পরে তাদেরকে সাহায্য করতে মজনু মৃধার নেতৃত্বে ৪০/৪৫ জনের একটি গ্রুপ নোয়াদিয়া থেকে, আব্দুল মান্নান মাস্টারে নেতৃত্বে ২৫/২৬ জনের আর একটি গ্রুপ চন্দনদিয়া থেকে এবং নেভাল সিরাজের নেতৃত্বে অপর ২০/২২ জনের আর একটি গ্রুপ ঘাসিদিয়া থেকে পুটিয়া ঘোড়াতলা এসে একত্রিত হয়। ৪ টি গ্রুপ স্ব স্ব অবস্থানে থেকে পাক বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে চুর্তুদিক থেকে গোলাবর্ষন শুরু করে। পাক বাহিনীরাও পাল্টা গুলি ছুড়তে শুরু করে। পুরো পুটিয়া এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনিত হয়।
এ যুদ্ধে শহীদ হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাদেকুর রহমান সরকার ও সহ যোদ্ধা মিয়ার উদ্দিন। সেদিনের সেই যুদ্ধে কমান্ডার সাদেকুর রহমানের ভুমিকাই ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দিক্বিদিক জ্ঞান শূণ্য হয়ে রাইফেল হাতে নিয়ে পাক বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সম্মুখ পানে এগিয়ে যান। একসময় ঘাতকের একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় তার বুকে। তবু তিনি পিছু হটেননি এ অবস্থাতেই গুলি ছুড়তে থাকে পাক বাহিনীর দিকে। এক সময় রক্তক্ষরণ হতে হতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শুধু তিনি নন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মিয়ার উদ্দিনও শত্রু পক্ষের গুলিতে নিহত হন। এদিকে আমাদের চুতুর্মুখি আক্রমনের ফলে পাক বাহিনী দিশেহারা হয়ে উঠে। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে পাক বাহিনীর মেজরসহ বেশ কয়েকজন সেনা নিহত হয়। এক সময় প্রচন্ড গোলাগুলির পর মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেয় পাকবাহিনীর ক্যাম্প।
তবে আশার বাণী এই যে, ১৯৯৯ সালের ২২ নভেম্বর শহীদ সাদেকুর রহমান ও মিয়ার উদ্দিনের নামে শিবপুরের একটি সড়কের নামকরণ করা হয় এবং তা উদ্বোধন করেন, মুক্তিযোদ্ধা মো: নূরুজ্জামান ভূঁইয়া।
শিপ্র/শাহোরা/