নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের রাজনীতিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের একই টেবিলে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠার দৃশ্য মেলা ভার। ব্যক্তিগত জীবনে তাও হয়তো দেখা মেলে কিন্তু পেশাগত জীবনে এমনটা দেখা পাওয়া সত্যি কঠিন। আর এই দূর্লভ চিত্র দেখা মিলল নরসিংদীতে। সোমবার (৪ নভেম্বর) রাতে নরসিংদী আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উভয় দলের নেতারা খোশগল্পের পাশাপাশি ভুড়িভোজও করেন।
এসময় খোশগেল্প মেতে উঠতে দেখা গেছে বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা আহবায়ক খায়রুল কবির খোকন, যুগ্ম আহবায়ক এম এ জলিল, সদস্য সচিব মনজুর এলাহী(শেষ সময়ে উপস্থিত হন), আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নরসিংদী-১ (সদর) আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম হীরু বীরপ্রতীক ও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর খুবই ঘনিষ্ট ভাজনজন আ’লীগ নেতা এড. আফজালুর রহমান মুনির, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এড. আবদুল বাছেদসহ জেলার সিনিয়র নেতাগণএবং আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
তবে লোকমুখে শুনা যায়, ভুড়িভোজের জন্য যে গরু জবাই করা হয়ে তার ব্যায় বহনকারী এড. আফজাল মুনির। যদি এমনটাই হয় তাহলে বলা চলে আওয়ামী লীগ নেতার টাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ভুড়িভোজ হয়েছে।
তবে নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে জানা যায়, গত ২ অক্টোবর নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের সিদ্দিকুর রহমান নাহিদের নেতৃত্বে জেলা আইনজীবী সমিতিতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় হামলার শিকার হয়ে ৫ জন আইনজীবী আহত হয়। আইনজীবীদের সাথে বিষয়টি মীমাংসার জন্য জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ সোমবার রাতে আইনজীবী সমিতিতে আসেন এবং বিষয়টি মীমাংসায় সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেন। এ সময় এডভোকেট আফজাল মুনির জেলা আইনজীবী সমিতিতে উপস্থিত ছিলেন।
আ’লীগ নেতা এড. আফজালুর রহমান মনির টাকায় কেনা গরু জবাই করে এ আয়োজনের জন্যই হয়তো বিষয়টি ছিল টপ সিক্রেট। যার জন্য আইনজীবীতে এ আয়োজনে ছবি তোলা ছিল নিষিদ্ধ। আর এ বিষযটি মাইক দিয়ে ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করে দেয। শুধু তাই নয় মাইকে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য ঘোষনা দিয়ে বলেন, ‘ সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা যারা উপস্থিত আছেন, তারা বসেন আপনাদেরকে যথাযথ ভাবে আপ্যায়ন করা হবে। তবে আপনারা কেউ কোন ছবি বা ভিডিও করবেন না।’ মাইকে এই ঘোষনায় সাংবাদিকতাকে করেছে বাধাগ্রস্ত।
বাংলাদেশ আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. আফজাল মনি ফু-আং গ্রুপের মালিক। তিনি নরসিংদী সদর উপজেলার চর এলাকা করিমপুরের সন্তান। আওয়ামী লীগের দলীয় কোন পদে না থাকলে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগে রয়েছে তার বেশ ভালো।বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর বিজয় তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করে ছিলেন। এরই জন্য নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের তার রয়েছে একটি শক্ত অবস্থান। সেই জন্যই দলীয় পদ না থাকলেও এড. আফজাল মনিরকে আওয়ামী লীগ নেতা বলেই সবাই তাকে জানেন।
সোমবার রাতে আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাকর্মীরা। দুই দলের নেতাকর্মীরা একে অপরের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করেন। এক টেবিলে বসে মজার কোন ঘটনা বলাবলি করে একই সাথে হেসে উঠেন।
বক্তব্য পর্বে নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন তার বক্তব্যে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদকে নিয়ে মন্তব্য করায় পরিস্থিতি অনেকটা ঘোলাটে হয়ে ওঠে। তোমার নাহিদের সমর্থকরা অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেনের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানায়। নাহিদ সহ তার সমর্থকরা আইনজীবী সমিতি কার্যালয় ছেড়ে চলে যেতে চাইলে সমিতির কয়েকজন নেতৃবৃন্দ তাকে বাধা দেয় এবং বিভাগ এ বিষয়টি মীমাংসা আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র এক আইনজীবী বলেন, আসলে এই অনুষ্ঠানটা মূলত আমাদের আইনজীবী সমিতির। আর এর ব্যয়ও বহন করে আইনজীবী সমিতি। খোকন ভাই অনেকদিন আগেই আইনজীবী সমিতিতে আসার কথা ছিল। কিন্তু সময় সুযোগের অভাবে তা হয়ে উঠেনি। ছবি তোলা কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিষয়টি জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি ঠিক বলতে পারব না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট আবদুল বাছেদ বলেন-“সব বিষয় ফোনে বলা যায় না। সরাসরি আমার চেম্বারে আসলে বুঝিয়ে বলতে পারবো। তবে এটা তেমন কিছু নয় ; আফজাল মনির আমাদের আজীবন সদস্য ”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির আহবায় খায়রুল কবির খোকনের সাথে যোগাযোগ করতে তার মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শিপ্র/ আবছি/